বানু
নাযীরের ইহুদিদের বহিষ্কারের
পরপরই মুহাম্মদ তার দত্তক
পুত্র জায়েদের স্ত্রীকে
বিয়ে করে তার অনুসারীদের
চমকে দেন। কারণ, এর
মাধ্যমে তিনি আরব সংস্কৃতির
নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেন;
এমনকি সাহাবিদের
(অনুসারী)
একাংশের মধ্যে
মুহাম্মদকেই এখন 'মোনাফেক'
বলে খারিজ করে
দেয়ার একটা মনোভাব দেখা
যাচ্ছে! অবস্থা
বেগতিক দেখে তিনি তার সমালোচকদের
শাহাদার (ইসলাম
গ্রহণের বাক্য) সুরক্ষা
তুলে নিয়ে হত্যার করার হুমকি
দিলে তবেই পরিস্থিতি শান্ত
হয়।
ইসলামিক আদিগ্রন্থে ঘটনাটি নিম্নরূপ :
এটি
একটি উষ্ণ বিকেল ছিল এবং
মুহাম্মদ স্বপ্নময় অবস্থায়
ছিলেন যখন তিনি তার পালকপুত্র
জায়েদের ঘরের দরজায় টোকা
দেন। তাকে সেদিন স্বাভাবিক
সময়ের অপেক্ষার চেয়ে একটু
বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল,
কিন্তু অবশেষে
যখন দরজা খোলা হল, মনে
হচ্ছে যেন আল্লাহ স্বর্গের
দরজা খুলে দিয়ে মুহাম্মদের
সামনে একটি কালো চোখের হুরকে
দেখাচ্ছেন! তার
সামনে দাঁড়িয়ে ছিল জাহাশের
(Jahsh) মেয়ে
- জায়েদের
স্ত্রী জয়নাব। তিনি পাতলা
পোশাক পরিহিতা ছিলেন। পোশাকের
ভিতর দিয়ে তার কোমর আর দুই
স্তনের মধ্যকার ভাঁজ দেখা
যাচ্ছিল। জয়নাব তার ঠোঁট
বাঁকা করে তাকে ঘরে ঢোকার
আমন্ত্রণ জানিয়ে বললেন,
“হে আল্লাহর
রাসুল, আপনি
আমাদের ঘরে আসবেন?” যদিও
মুহাম্মদ স্পষ্ট উচ্চারণে
কথা বলতেন, তিনি
একজন স্পষ্টভাষী মানুষ ছিলেন,
কিন্তু তিনি
একটি শব্দও বের করতে পারলেন
না। তিনি তোতলাতে তোতলাতে
বললেন, “আ...মি....আমি...আমি.......
জায়েদকে দেখতে
এসেছি!”
জয়নাব
তার চোখের পাতা পিটপিট করে
বললেন, “হে
আল্লাহর রাসুল, তিনি
বাড়িতে নেই। আমি কি তাকে বলব
যে আপনি তাকে খুঁজতে
এসেছিলেন?”
“হ্যাঁ,
হ্যাঁ,
অবশ্যই”।
এবার
তিনি এই লোভাতুর অবস্থা থেকে
দূরে সরে গেলেন এবং বিড়বিড়
করে বললেন, “সকল
প্রশংসা আল্লাহর যিনি হৃদয়ের
নিষ্পত্তি করেন!”
ইসলামিক
আদিগ্রন্থে লেখা আছে যে,
যখন জায়েদ
ফিরে আসেন, জয়নাব
তাকে মুহাম্মদের কথা বলেন
এবং তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি তাঁকে
ভেতরে আসতে বলেছিলে, তাই
না?”
“জী
বলেছি, কিন্তু
উনি প্রত্যাখ্যান করেন”।
“তুমি
কি তাঁকে কিছু বলতে শুনেছ?”
জয়নাব
বললেন, যখন
তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন তখন তাঁকে
এমন কিছু বলতে শুনলাম যার
কিছুই আমি বুঝতে পারিনি। আমি
তাকে বলতে শুনেছি, “সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর যিনি অন্তরকে
নিষ্পত্তি করেন” জায়েদ
মসজিদে মুহাম্মদের কাছে গিয়ে
বললেন, “হে
আল্লাহর রাসুল, আমি
জানতে পেরেছি যে, আপনি
আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আপনি
কি ভেতরে ঢুকেছিলেন?”
মুহাম্মদ তাকে
বলেন যে তিনি ভেতরে যাননি।
জায়েদ তখন সন্দেহ করেন যে
তিনি তার স্ত্রীর প্রতি
প্রেমমুগ্ধ হয়েছেন,
এবং যদি তাই
হয় তাহলে তিনি তার সাথে বিচ্ছেদ
করতেও রাজি আছেন। “হে আল্লাহর
রাসুল, আমার
পিতা ও মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত
হোক। হয়তো আপনি জয়নাবকে
পছন্দ করেছেন। আমি তাকে ছেড়ে
(তালাক)
দিতে পারি”
মুহাম্মদ
বললেন “তোমার স্ত্রীকে তোমার
কাছেই রাখো”
জায়েদ
বললেন “হে আল্লাহর রাসূল,
আমি তাকে ছেড়ে
চলে যাব”
তিনি
আবার বললেন “তোমার স্ত্রীকে
তোমার কাছেই রাখো”
গল্পের স্বাভাবিক রূপায়ণে ইসলামিক সাহিত্যিকরা বিষয়টি নিয়ে বারবার ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে লিখে গেছে। তাদের লেখায় যেটা ভেসে ওঠে সেটা হলো, জায়েদ তাকে তালাক দেয়, এবং চারমাস অপেক্ষা করার পর যখন মুহাম্মদ নিশ্চিত হলেন যে জয়নাব গর্ভবর্তী না তখন তিনি জায়েদকেই জয়নাবের কাছে পাঠিয়ে দেন বিয়ের পয়গাম নিয়ে যে পয়গাম জয়নাব আনন্দের সাথেই মেনে নেন। সেখানে একটা বিয়ের ভোজসভার আয়োজন করেন মুহাম্মদ। মুহাম্মদের অন্যান্য স্ত্রীরাও সবাই আনন্দিত হন। মুহাম্মদ এবং জয়নাব আনন্দিত ছিলেন এবং জায়েদও আনন্দিত হন তাদের দুজনকে আনন্দিত দেখে (১)।
মুহাম্মদের বিয়ে নিয়ে আনন্দের এই আবেগী গল্পটি নিষ্ঠুর এক বিশ্বাসঘাতকতা এবং ছেলের প্রতি বাবার কৃত অন্যায়কে আড়াল করে দেয়। জায়েদ নিছক একজন বিশ্বস্ত সাহাবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মুহাম্মদের পালকপুত্র, তার (জীবিত) একমাত্র পুত্র। ৩০ বছর ধরে জায়েদ তাকে পিতা হিসেবেই দেখেছেন। জায়েদের বাল্যকালের ইতিহাস সবাই জানত। খাদিজার ভাগ্নে হাকিম ইবনে হিজাম জায়েদকে ওকাযের দাসবাজার থেকে কিনে উপহার হিসেবে খাদিজাকে দেন; আর খাদিজা জায়েদকে ব্যক্তিগত দাস হিসেবে মুহাম্মদকে দিয়েছিলেন। যখন জায়েদের আসল পিতা মক্কায় তাকে খুঁজতে আসেন এবং পেয়ে যান জায়েদ তখন মুহাম্মদের সাথেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। মুহাম্মদ জায়েদকে দত্তক নেন এবং কাবা মন্দিরে গিয়ে পিতা-পুত্রের এই সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেন। এরপর থেকে তিনি মুহাম্মদের পুত্র জায়েদ তথা জায়েদ ইবনে মুহাম্মদ নামে পরিচিত ছিলেন। খাদিজা ও আলীর সাথে জায়েদ প্রথম ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। জায়েদ যখন বিশ্বাস করলেন যে, আল্লাহ তাঁর পিতা মুহাম্মদকে বিশেষ উদ্দেশ্যে (নবী হিসেবে) অভিষিক্ত করেছেন তখন তিনি প্রথম আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলেন।
এই
ঘটনার পর মুহাম্মদ তার মায়ের
(আমিনা)
কাছ থেকে
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত
আবিসিনীয় দাস বারাকাকে
জায়েদের সাথে বিয়ে করিয়ে
দেন। সেই ঘরে মুহাম্মদের পুত্র
জায়েদের একটি ছেলে হয়,
যার নাম রাখা
হয় ওসামা (Osama ) ।
মুহাম্মদের সাথে পিতা-পুত্রের
সম্পর্কের জন্য জায়েদ গর্বিত
ছিলেন। যখন তিনি নিজেকে পরিচয়
করিয়ে দিতেন তখন তিনি বুক
ফুলিয়ে বলতেন, “আমি
মুহাম্মদের পুত্র জায়েদ!”
আর তিনি যেখানেই
যেতেন, লোকে
তার দিকে ইঙ্গিত করে বলত,
“ইনি মুহাম্মদের
পুত্র জায়েদ!” পরবর্তীতে
আলী, জুবায়ের,
হামজা এবং
অন্যান্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের
সাথে জায়েদকেও সবসময় তার
পালক পিতার পক্ষে লড়াই করতে
হয়েছে। যদিও হত্যার সংখ্যার
দিক দিয়ে তিনি জুবায়ের আর
আলীর সমান কখনো হবেন না,
তারপরও যখন
প্রয়োজন হতো তখন তিনি ঠান্ডা
মাথায় হত্যা করতে বেশ পটু
ছিলেন। যেমন, বিধ্বংসী
উহুদ যুদ্ধের পরে একজন দলভ্রষ্ট
মক্কাবাসীকে নিশানা অনুশীলনের
জন্য ব্যবহার করতে একটি গাছে
বেঁধেছিলেন জায়েদ। সেই
যুদ্ধের একবছর পর যখন জায়েদ
চল্লিশ বছর পূর্ণ করলেন তখন
মুহাম্মদ তাকে আরেকটি স্ত্রী
নেয়ার ব্যবস্থা করেন-
এই স্ত্রী
ছিলেন জয়নাব।
তিনি মুহাম্মদের ফুফু উমাইমার কন্যা ছিলেন - সম্ভবত শত শত কাজিনের একজন যিনি মুহাম্মদের পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবের বংশের একজন (২)। জয়নাব ও তার প্রথম বর ছিলেন প্রথমদিকের ধর্মান্তরিতদের মধ্যে অন্যতম এবং মক্কাবাসী নির্যাতন থেকে বাঁচতে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন, কিন্তু তিনি আবিসিনিয়াতেই মারা যান। মুহাম্মদ মক্কা থেকে পালিয়ে ইয়াছরিবে যাওয়ার পর জয়নাব আবিসিনিয়া ছেড়ে ইয়াছরিবে চলে আসেন। মুহাম্মদের একজন উৎসাহী সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করা ছাড়া, জায়েদের সাথে তার বিয়ের আগে পর্যন্ত তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। বলা হয় যে, তিনি (জয়নাব) এই বিয়েতে আপত্তি জানিয়েছিলেন, কারণ জায়েদ দাস ছিলেন, অন্যদিকে জয়নাব ছিলেন অভিজাত মুত্তালিবের বংশের একজন। কিন্তু বিয়েটি মুহাম্মদের ইচ্ছেতেই হয় এবং অবশেষে মুহাম্মদ জায়েদের পক্ষ থেকে বিশাল অংকের যৌতুক দিয়ে তাকে বিয়েতে রাজি করান (৩)। বিয়ের সময় জয়নাবের বয়স ছিল ৩৪ বছর।
ইসলামিক ইতিহাসে বলা হয়, জয়নাবের জায়েদকে বিয়ে করতে রাজি হবার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, তিনি মুহাম্মদের কাছাকছি থাকতে পারবেন। জয়নাব মুহাম্মদের প্রাক্তন দাসের বদলে মুহাম্মদকেই বিয়ে করা বেশি পছন্দ করতেন, এবং সেটি নিশ্চয়ই প্রকাশ করেছিলেন। এক বছরের মধ্যে তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি ঘটে, এবং জায়েদের ঈর্ষার পেছনে সম্ভবত এটিও আরেকটি কারণ ছিল। মুহাম্মদের দিকে তাকালে জয়নাবের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে যেত, কিন্তু এই জয়নাবেরই মুখের উজ্জ্বলতা মলিন হয়ে যেত যখন দেখতে বেঁটে, কালো, গোলাকার চেহারা, চ্যাপ্টা নাকের বিবাহিত প্রাক্তন ক্রীতদাস জায়েদের দিকে তিনি তাকাতেন। যখনই মুহাম্মদ তার সাথে দেখা করতে আসতেন, তিনিও তখন মুহাম্মদের কাছে আসতেন। জায়েদের চোখ এই বিষয়গুলো এড়াত না। মুহাম্মদও জয়নাবের আগ্রহের প্রতি সম্মতি দেখালেন। সম্ভবত এজন্যই তিনি জায়েদের বাড়িতে এমন সময়ে যেতেন যখন জায়েদ সেখানে থাকত না। জয়নাবের মায়াময়ী চোখ দুটি মুহাম্মদের কামভাব জাগিয়ে দিত। আর মুহাম্মদ তখন জয়নাবের মধ্যেও তাঁর প্রতি যে আকর্ষণবোধ দেখতে পেতেন তার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন মনে করলেন। যখন জয়নাব দরজা খুলে দিয়েছিলেন তখন তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি যা ভাবছেন তাই সঠিক। মুহাম্মদ জয়নাবকে এত গভীরভাবে চেয়েছিলেন যে, তাঁর পালকপুত্রকে দিয়ে তালাক পর্যন্ত করিয়ে নিজের পথ পরিষ্কার করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন এই বলে, “সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি হৃদয়ের ফয়সালা করেন!” এমনকি জায়েদও সত্যিই বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ মুহাম্মদের সাথে কথা বলেছেন এবং ফেরেস্তারা নিয়মিত তার কাছে এসে তাকে এই বিষয়ে সর্বশেষ আয়াত দিয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস করেই তিনি অধীর আগ্রহে তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করেছেন। সম্ভবত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত জায়েদ মুহাম্মদকে তার বাড়িতে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি একদিকে মুহাম্মদের প্রতি আনুগত্য এবং অন্যদিকে স্ত্রীর উপর সন্দেহের দোলাচলে দুলছিলেন। আসলেই তাদের দুজনের মাঝে কি ঘটেছে তা জানতে জায়েদ জিজ্ঞেস করলেনঃ “আমি জানতে পেরেছি আপনি আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন। আপনি কি ভেতরে গিয়েছিলেন?” এটি প্রশ্নের চেয়েও অভিযোগের ইঙ্গিত বেশি বহন করে।
মুহাম্মদ জয়নাবকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার ইচ্ছা কয়েক মাসের জন্য প্রকাশ্যে আনেননি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে জয়নাব গর্ভবতী নন। একদিন সকালে আয়েশার সাথে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় অচেতন হয়ে যান, পরে সজাগ হলে তিনি মুচকি হেসে আয়েশার কানে কানে কিছু একটা বললেন। তিনি উত্তেজিত ছিলেন, এবং এটা পরিষ্কার ছিল যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে যাচ্ছেন, কিন্তু তিনি কথা বলার জন্য একটু সময় নিচ্ছিলেন। মুহাম্মদের অদ্ভুত ব্যাপার ছিল তিনি মুখে অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে পারতেন - তা হোক আনন্দ, ক্রোধ বা যাই হোক না কেন - এবং তারপর এই মুখের অভিব্যক্তি দেখে লোকে তাকে জিজ্ঞেস করত, তার মনে যা আছে তা প্রকাশ করার জন্য। এবারও তিনি প্রথমে বলেননি, যতক্ষণ পর্যন্ত না আয়েশা তার মুখের অভিব্যক্তির কারণ জানতে চাইলেন- “হে আল্লাহর রাসুল, কি এমন ঘটল যে আপনাকে এত খুশি দেখাচ্ছে?”
মুহাম্মদ
আল্লাহর কাছ থেকে সদ্য পাঠানো
বার্তা পাঠ করলেন :
يأَيُّهَا
النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لا التى
أيْتَ أَجُورَهُنَّ وَ مَا مَلَكَتْ
يَمِيِّ مِمَّا آفَاءَ اللهُ عَلَيْكَ
وَ بَنتِ عَيْكَ وَ بَنْتِ عَلَيْكَ وَ
بَنْتِ خَالِكَ وَ بَنتِ خَلْتِكَ الَّتِي
هَاجَرْنَ مَعَكَ وَ امْرَأَةً مُّؤْمِنَةً
إِنْ وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ
إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَنْ يُسْتَنْكِحَهَا
* خَالِصَةً
لَّكَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِيْنَ قَدْ
عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي
أَزْوَاجِهِمْ وَ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ
لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ وَ
كَانَ اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا (۵۰)
“হে নবী, আমি তোমার জন্য তোমার স্ত্রীদেরকে হালাল করেছি যাদেরকে তুমি মোহরানা দিয়েছ, আর আল্লাহ তোমাকে ফায় (বিনা যুদ্ধে লব্ধ) হিসেবে যা দিয়েছেন তন্মধ্যে যারা তোমার মালিকানাধীন তাদেরকেও, এবং তোমার জন্য হালাল করেছি এবং তোমার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যাকেও যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে; আর কোন মুমিন নারী যদি নবীর জন্য নিজকে হেবা করে, নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও তার জন্য বৈধ। এটা বিশেষভাবে তোমার জন্য, অন্য মুমিনদের জন্য নয়; আমি তাদের ওপর তাদের স্ত্রীদের ও তাদের দাসীদের ব্যাপারে যা ধার্য করেছি তা আমি নিশ্চয় জানি; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (৫,৬)।
[মুহাম্মদ প্রেমে মুগ্ধ! । রাজা ডেভিডের মত যখন তিনি বাথশেবাকে (Bathsheba) স্নান করতে দেখলেন, মুহাম্মদ পালকপুত্রের বাড়িতে গিয়ে একদিন জয়নাবকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পুত্রকে দিয়ে তাকে তালাক দিয়ে তার হেরেমে আরেক নতুন সদস্য যুক্ত করলেন। এরপরই তিনি পালকপুত্র নেওয়ার প্রথা (দত্তকপ্রথা) বিলুপ্ত করে এই প্রথার সমালোচনা করেন, যাতে জায়েদকে আর কেউ তার পুত্র বলে সম্বোধন না করে।]
কিন্তু তেরো বছরের আয়েশা ঠিকই ঘটনাটি বুঝতে পারলেন। ছোট আয়েশার অনুভূতিতে নিশ্চয় আঘাত লেগেছিল এবং তিনি ঈর্ষান্বিত হলেন যে, মুহাম্মদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বী তার জীবনে আসছে, তাই তিনি বললেন, “আমি তো দেখছি আপনার প্রভু আপনার মনস্কাম পুরণ করার ব্যাপারে খুব অগ্রণী!” (৭)।
মুহাম্মদ তার রচনাগুলোকে বিশেষ কয়েকভাবে প্রচার করতেন। প্রধান পদ্ধতি ছিল উপদেশ বিতরণ। যখন তার জামাতে সবাই জড়ো হয়ে খেজুর পাতার মাদুরের উপরে দুই হাঁটু ভাঁজ করে সামনে বসতেন, তিনি তখন কবিতা পাঠের মতো করে তার রচনাগুলোকে আবৃত্তি করতেন এবং নতুন আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান করতেন। তিনি বলতেন, এইগুলো তার উপর “নাজিল হয়েছে”। বিভিন্ন সময়ের যে পরিস্থিতি বা প্রেক্ষিতের সৃষ্টি হয়েছে তার সাথে একটা যোগসূত্র স্থাপন করতেন একথা বলে যে, “আল্লাহ আমাকে একথা জানিয়েছেন” অথবা, “ফেরেস্তা আমার কাছে আল্লাহর বাণী নিয়ে এসেছেন” – এবং এভাবেই তিনি নতুন আয়াত প্রবর্তনের সূত্র ব্যাখ্যা দিতেন। আরেকটি পদ্ধতিও অবলম্বন করতেন - তিনি তার অনুসারীদের মধ্য হতে কয়েকজনকে তার সাম্প্রতিক নাজিলকৃত আয়াতগুলোকে মুখস্থ করিয়ে জনসম্মুখে বারবার আবৃত্তি করার জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাতেন। তবে আয়াতগুলো যেভাবেই আসুক না কেন, প্রত্যাশা করা হতো যে তারা সেগুলো মুখস্থ করবে এবং নামাজের সময় তা পাঠ করবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুমিনরা তার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আবৃত্তি করত, “হে নবী! আমি আপনার জন্য আপনার স্ত্রীদেরকে হালাল করে দিয়েছি.......”।
জয়নাব
মুহাম্মদের প্রস্তাব সম্পর্কে
জানতে পারলেন। একটি সংস্করণে
পাওয়া যায়, মুহাম্মদ
একজন ক্রীতদাসীকে সুসংবাদ
নিয়ে তার কাছে পাঠিয়েছেন,
কিন্তু অন্য
সংস্করণে পাওয়া যায় এবং
সম্ভবত যা ঘটেছিল, তিনি
এই প্রস্তাব (বিয়ের)
নিয়ে জয়নাবের
প্রাক্তন বর জায়েদকেই
পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন,
“যাও এবং তার
কাছে আমার কথা বলো”। জায়েদ
আনুগত্যের সাথে জয়নাবের
কাছে গেল। সে দরজায় টোকা না
দিয়েই জয়নাবের ঘরে ঢুকলো।
জয়নাবের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।
জয়নাব বুঝতেও পারেনি যে,
জায়েদ তার
পেছনে দাঁড়ানো। সে রান্নার
জন্য ময়দা মাখাচ্ছিল,
ঠিক যেমনটা
তারা একসাথে থাকার সময় জয়নাব
করতেন। তার কালো চুল ঘাড়
পর্যন্ত এসে পোশাকের উপর পিঠে
আটকে ছিল। জয়নাব একই পোশাক
পরিহিত ছিলেন ঠিক যখন তারা
একসাথে থাকতেন। সেই একই চপ্পল
আর পায়ে সেই একই নুপুর পরা
ছিল। যখন তিনি ঘুরে দেখলেন
পেছনে কে আছে, তখন
তার মুখটি মলিন হয়ে গেল,
ঠিক যেভাবে
তিনি আগেও মলিন হয়ে যেতেন
তাকে দেখে। জায়েদ অত্যন্ত
আনন্দের সাথে তাকে বললেন,
“হে জয়নাব,
আনন্দ কর!
আল্লাহর রাসুল
আমাকে তার পক্ষে থেকে তোমাকে
বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে
পাঠিয়েছেন” (৮)।
মসজিদের এক কক্ষেই বিয়ের ভোজের আয়োজন করা হয়। যে ঘরটিতে জয়নাব থাকবেন ঠিক তার পাশেই অন্য স্ত্রীদের ঘর। যদিও অন্য স্ত্রীরা তাদের গৃহের ভিতরেই অবস্থান করছিলেন। অতিথিরা দলে দলে নবদম্পতিকে (মুহাম্মদ-জয়নাব অভিনন্দন জানাতে এবং ভোজে অংশগ্রহণ করতে এসেছিল। খাবারের তালিকায় ছিল মোটা রুটি এবং সদ্য জবাই করা ছাগলের মাংস। অতিথিরা সেখানে বেশ সময় পর্যন্ত আনন্দ করছিলেন, মুহাম্মদ শেষমেষ দাঁড়িয়ে ইঙ্গিত দিলেন যে পার্টি শেষ হয়ে গেছে। এরপর যা ঘটেছে তা কোরআনেও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে : বেশিরভাগ মানুষ তার ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছিল এবং চলেও গিয়েছিল, কিন্তু তিনজন লোক গভীর কথোপকথনে ব্যস্ত ছিল এবং অবশ্যই মুহাম্মদ ও জয়নাব ছাড়া বাকি সবাই চলে গেছে। বলা হয়, মুহাম্মদ এই ধরনের পরিস্থিতিতে তাদেরকে বের হয়ে যেতে বলতে লজ্জাবোধ করেন, এবং তাই তিনি তাদেরকে বের হতে বলেননি। তার বদলে তিনি আলাদা ঘরে তার অন্য স্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। প্রতিটি ঘরে যাওয়া-আসার মধ্যে তিনি একবার করে বাসর ঘরের দিকে তাকাতেন, এবং তখনও তারা সেখানে ছিল! এখন যখন চারমাসের অন্তর্বর্তীকালীন আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেছে, তিনি খুব প্রবলভাবে জয়নাবের সাথে শুতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এরা অবিবেচকের মতো তাতে বাধা তৈরি করে খোশগল্পে মত্ত ছিল । মুহাম্মদের ভেতর সন্দেহ এলো যে, তারা হয়তো এইভাবে এখানে পড়ে আছে যার আসল কারণ হচ্ছে তারা মুহাম্মদের নববধুর প্রতি কু-দৃষ্টি দিচ্ছে! অবশেষে তারা চলেও গেল, কিন্তু মুহাম্মদের এই সন্দেহ এত গভীরে গিয়ে দানা বাঁধল যে, তিনি এখানে আল্লাহকে নামিয়ে আনলেন। আল্লাহর মাধ্যমে তিনি এই ধরনের উৎসব সম্পর্কে শিষ্টাচারের নিয়মকানুন জারি করলেন। সম্ভবত ভবিষ্যতে আরো প্রেমের সন্ধান এবং আরো বিয়ে এবং বিয়ের ভোজেরও আয়োজন করবেন, তাই আগেই এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে নিলেন। আল্লাহ মহাবিশ্বের শাসনকার্যের মাঝে সময় বের করে মুহাম্মদকে এই বিষয়ে বলেন :
يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ
النَّبِيِّ إِلَّا أَنْ يُؤْذَنَ لَكُمْ
إِلَى طَعَامٍ غَيْرَ نَظِرِينَ اللهُ
وَ لَكِنْ إِذَا دُعِيْتُمْ فَادْخُلُوا
فَإِذَا طَعِمْتُمْ ن فَالتَشِرُوا وَ
لَا مُسْتَأْنِسِيْنَ لِحَدِيدٍ إِنَّ
ذلِكُمْ كَانَ يُؤْذِى النَّبِيُّ
فَيَسْتَحْى مِنْكُمْ وَ اللَّهُ لَا
يَسْتَحْيِ مِنَ الْحَقِّ
“হে
মুমিনগণ, তোমরা
নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না;
অবশ্য যদি
তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি
দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ
কর) খাবারের
প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না
করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা
হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর এবং
খাবার শেষ হলে চলে যাও আর
কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না;
কারণ তা নবীকে
কষ্ট দেয়, সে
তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ
করে; কিন্তু
আল্লাহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ
বোধ করেন না” (9)
এই বিয়ে নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। তার এই কর্মকাণ্ডে তারা ঝাঁকুনি খেলেও, সত্যিকারের মুমিনরা ভেবে নিয়েছিল যে, মুহাম্মদ কোন অন্যায় করতে পারেন না। যদি ঈশ্বর নিজেই বিয়ের অনুমতি দেন, তাহলে তিনি কিভাবে না করে থাকতে পারেন? এমনকি যদি তাদের মনের কোনো কোণে সন্দেহের জন্ম দেয় যে এই ব্যাপারটাতে ঝামেলা আছে, আর আয়াতগুলো মুহাম্মদের নিজের সেবার উদ্দেশ্যেই আবির্ভূত হয়েছে, তবুও তারা তা নিজেদের মনের ভেতরই রাখলেন। ঈশ্বরের অনুমতিপ্রাপ্ত মুহাম্মদের আচরণের জন্য সমালোচনা করা হবে ভণ্ডামি, মুনাফিকী কাজ, জাহান্নামের আগুনে পোড়ার মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নামমাত্র যারা জীবনের ভয়ে মুহাম্মদের ধর্মকে আলিঙ্গন করেছিল তারা এই বিষয়টি নিয়ে চুপচাপ ছিল না। সবসময় মুহাম্মদের বদনাম করার উপায় খুঁজতে থাকা অদম্য আবদুল্লাহ বিন উবাইর নেতৃত্বে একদল মুহাম্মদের এই কাজকে অনৈতিক বলে তিরস্কার করেন। মুহাম্মদের আগমনের আগপর্যন্ত আরবরা সবসময়ই যৌনতার বিষয়ে সহজ ছিল, কিন্তু দত্তক বা নিজের পুত্রের সঙ্গীকে নিজের স্ত্রীরূপে গ্রহণ করাকে ভালো চোখে দেখতেন না। এটা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। কারণ এটি পিতাকে পুত্রের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেবে এবং পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস করে দেবে। এখন মুহাম্মদ সেই নিষেধাজ্ঞাকেই লঙ্ঘন করেছেন। মুহাম্মদ এবারও তার সমালোচকদের একটিমাত্র উপায়ে থামানোর চেষ্টা করছিলেন : তিনি তাদের উপর থেকে শাহাদার ঢাল (কালেমার সুরক্ষা) সরিয়ে নেয়ার হুমকি দেন, যার ফলে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এবং আল্লাহর কণ্ঠে তিনি এক রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ডের হুমকিও দেন :
لَئِنْ
لَّمْ يَنْتَهِ الْمُنْفِقُونَ وَ
الَّذِيْنَ فِي قُلُوبِهِمْ مَّرَضٌ وَ
الْمُرْجِفُونَ فِى الْمَدِينَة
لَنُرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا
يُجَاوِرُوْنَكَ فِيهَا إِلَّا قَلِيْلًا
(۶۰)
مَّلْمُونِينَ :
أَيْنَمَا تَقِفُوا
أخِذُوا وَ قُتِلُوا تَقتِيلًا (۶۱)
“যদি মুনাফিকগণ এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা ও শহরে মিথ্যা সংবাদ প্রচারকারীরা বিরত না হয়, তবে আমি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তোমাকে উত্তেজিত করে দেব। অতঃপর তারা সেখানে তোমার প্রতিবেশী হয়ে অল্প সময়ই থাকতে পারবে। অভিশপ্ত অবস্থায়, তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, পাকড়াও করা হবে এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হবে।” (১০)
সমালোচকদের
হত্যা করার পরিবর্তে তিনি
তাদের সমালোচনার কারণকে হত্যা
করেন। ঠিক একজন রাষ্ট্রপতির
অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করার
মতো, তিনি
দত্তক নেয়ার মতো প্রাচীন
আরব প্রথা এবং দত্তক পুত্রের
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত
অধিকারকে বিলুপ্তর ঘোষণা
দেন। তিনি শুধু তা নিষেধই
করেননি, তিনি
এটাকে পেছনে সংঘটিত ঘটনার
ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য করে
তুলেছিলেন। তাই তাকে আক্রমণ
করার আর কোন কারণও ছিল না।
যেহেতু জায়েদ এখন আর তার
দত্তক নেয়া ছেলে না,
এমনকি অতীতেও
ছিল না। মুহাম্মদ তার ঈশ্বরের
কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে,
আল্লাহ দত্তক
নেয়াকে সমর্থন করেন না;
এটা মানুষের
একটা আবিষ্কার ছিল, আর
নিজের নাম অন্যকে দেয়ার যে
অভ্যাস আরবে ছিল, তা
ঈশ্বরের কাছে অসন্তোষজনক
ছিল।
কোরআনে
এ বিষয়ে নাজিল হয়েছেঃ
أَدْعُوهُمْ
لِآبَائِهِمْ هُوَ أَقْسَطُ عِنْدَ اللهِ
فَإِنْ لَّمْ تَعْلَمُوا آبَاءَهُمْ
فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَ
مَوَالِيكُمْ وَ لَيْسَ عَلَيْكُمْ
جُنَاحٌ فِيْمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ ةٌ
: وَ لكِن
مَّا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ وَ كانَ
اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا (۵)
“তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাক; আল্লাহর কাছে এটাই অধিক ইনসাফপূর্ণ। আর যদি তোমরা তাদের পিতৃ- পরিচয় না জান, তাহলে তারা তোমাদের ধর্মের ভাই এবং তোমাদের বন্ধু। আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (১১)।
জায়েদ
মুহাম্মদের এই অধ্যাদেশের
(দত্তক
নেয়ার নিষেধাজ্ঞা)
ভিকটিম। মুহাম্মদ
এখন শুধু তার স্ত্রীর সাথে
শুইছেন তাইই না, ত্রিশ
বছর পিতৃত্বে থাকা একজন পিতা
তাঁর বিশ্বস্ত ছেলেকে
প্রত্যাখ্যানও করছিলেন।
জায়েদ এখন আর জায়েদ ইবনে
মুহাম্মদ (মুহাম্মদের
পুত্র জায়েদ) না,
সে এখন হারিছার
(Haritha) পুত্র
জায়েদ। হারিছা তার জন্মদাতা
পিতার নাম যিনি তিনদশক আগে
মক্কায় তার হারানো ছেলেকে
খুঁজতে এসেছিলেন। এই অপমানের
দ্বারা জায়েদের মানসিক
বিপর্যয় বেশ জটিল হয়ে উঠেছিল।
সবাই জেনেছে কি ঘটেছে,
সুতরাং জায়েদ
যেন এখন একেবারেই নিঃস্ব
একজন।
তখন
থেকেই জায়েদ এক ক্রুদ্ধ মানুষ
হয়ে গেলেন। তিনি স্বেচ্ছায়
জিহাদের নেতৃত্ব দিতেন এবং
এক্ষেত্রে তিনি আরো বেশি
হিংস্র হয়ে উঠলেন। একটা
লুণ্ঠন অভিযান যেটা উত্তর
দিকের বেদুইন আদিবাসীর এক
কাফেলার বিরুদ্ধে পরিচালনা
করেছিলেন সেখানে তিনি আহত হন
এবং তার কিছু লোক নিহত হয়।
তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার
একটি দুর্ধর্ষ বাহিনীর নেতৃত্ব
দেন। হামলাকারীরা হাতের কাছে
যাকেই পাচ্ছে তাকেই হত্যা
করছে। আদিবাসী নেতার স্ত্রী
উম্মে কিরফা (Umm Qirfa) এবং
তার মেয়েকে তারা আটক করে।
জায়েদ উম্মে কিরফাকে এমন
নির্মমভাবে হত্যা করলেন যা
আগে কখনো কেউ দেখেনি। জায়েদ
উম্মে কিরফাকে দুটি উটের
মাঝখানে বেঁধে উট দুটি ছুটিয়ে
দিলে তাঁর শরীর দু'ভাগ
হয়ে যায়। এটা একটা নিষ্ঠুর
হত্যাকাণ্ড ছিল। উম্মে কিরফার
নিস্তেজ দেহটিকে একটা উটের
পেছনে বেঁধে মরুভূমির মধ্য
দিয়ে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া
হয় এবং তিনি অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে
মৃত্যুবরণ করেন। সাধারণত
শুধুমাত্র পুরুষদের হত্যা
করা হতো এবং নারী ও শিশুদের
ক্রীতদাস হিসেবে গ্রহণ করা
হতো। মুহাম্মদ এ ব্যাপারে
একটি সাধারণ অধ্যাদেশ জারি
করেছিলেন।
জায়েদ বেদুইন নারীর সাথে যা করেছেন, তার প্রাক্তন স্ত্রীর সাথে কি ঠিক তাই করতে চেয়েছিলেন? যদি তাই হয়, তাহলে মুহাম্মদের সাথে তার অন্তর কি করতে চেয়েছিল সেটা সহজেই অনুমেয়! জায়েদ উম্মে কিরফার মেয়েকে বন্দি করে মুহাম্মদের কাছে নিয়ে আসেন, সম্ভবত অবমাননা কাকে বলে শুধুমাত্র জায়েদই বুঝতে পারতেন। তিনি এখন তার প্রাক্তন পিতার কাছে নারীদের সরবরাহকারী হয়ে উঠলেন। এই নারী ছিলো মরুভূমির একজন সুন্দরী রমণী, তরুণ বয়সী, শক্তিশালী এবং গর্বিত, কিন্তু এখন সে কেবল একজন ক্রীতদাসী। প্রথমে মুহাম্মদ তাকে নিজের করে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু মুহাম্মদের এক মামা মুহাম্মদের কাছে এসে এই মেয়েকে নিজের জন্য চাইলেন। মামা তাকে দেখেছিলেন, তার চেহারা দেখে খুশি হয়েছিলেন, এবং তাকে সঙ্গী (যৌনদাসী) হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন। কয়েকদিন দোদুল্যমানতায় থেকে অবশেষে মুহাম্মদ নারীটিকে তার মামার হাতে তুলে দিলেন। মুহাম্মদ ছিলেন দাউদের (David) মতো যিনি হিতিতকে (Hittite) যুদ্ধে মরতে পাঠিয়েছিলেন, যাতে তিনি তার স্ত্রী বাথশেবাকে ( Bathsheba) নিজের কাছে নিতে পারেন। জয়নাবের সাথে বিয়ের পর মুহাম্মদ জায়েদকে বিভিন্ন অভিযানে ব্যস্ত রাখেন, এটির কারণ সম্ভবত প্রাক্তন দত্তক নেওয়া ছেলেকে যতটা সম্ভব ইয়াছরিব থেকে দুরে রাখা। দুই বছর পর হিতিতের ভাগ্যের মতই জায়েদের ভাগ্যেও একই পরিণতি ঘটে - যেই জায়গায় জায়েদের প্রাক্তন স্ত্রী তার প্রাক্তন পিতার সাথে শুয়ে আছে, সেই জায়গা থেকে বহুদুরের ভুমিতে একঝাঁক শত্রুর হাতে জায়েদ নিহত হন (১২, ১৩)।