বাংলা অনুবাদের ভূমিকা
ইসলামের প্রাণশক্তির উৎস হচ্ছে জিহাদ । এ জিহাদের মাধ্যমে মদিনা থেকে তার বিজয়ী রূপে আত্মপ্রকাশ, প্রসার এবং প্রতিষ্ঠা। জিহাদের তাৎপর্য বাস্তবে হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মের নামে যুদ্ধ এবং আরব আধিপত্য ও সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ। জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী আরব রাষ্ট্রের প্রসারের সঙ্গে ঘটেছে ধর্মের নামে পাইকারীভাবে পরের সম্পদ ও সম্পত্তি লুণ্ঠন ও আত্মসাৎকরণ, নারী ধর্ষণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরকে ‘কাফের’ বা ‘সত্য প্রত্যাখ্যনকারী” আখ্যায়িত করে আক্রমণ ও পরাজিত করে বন্দি ও দাসকরণ। এভাবে ইসলামে ধর্মের নামে জবরদস্তিমূলক ধর্মান্ত রকরণ, আরব সাম্রাজ্যবাদ এবং দাস ব্যবস্থার যে ঐতিহ্য বা উত্তরাধিকার গড়ে উঠেছে তাকে এ গ্রন্থে লেখক অজস্র তথ্যের সাহায্যে উদ্ঘাটিত করেছেন।
জিহাদের উপর বিপুলভাবে তথ্যসমৃদ্ধ এ অসাধারণ গ্রন্থ 'জিহাদ : জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার' M. A. Khan-এর লেখা 'Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism, and Slavery (i Universe, Inc; New York,Bloomington) নামক ইংরেজি গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ। যেহেতু জিহাদের সঙ্গে ইসলাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং বাঙালি পাঠকদের নিকট জিহাদকে আলাদাভাবে ইসলাম শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করার প্রয়োজন হয় না সেহেতু গ্রন্থের নাম অনুবাদের সময় ইসলামি জিহাদ নামকরণ না করে শুধু জিহাদ করা হয়েছে।
বঙ্গানুবাদে ভাষাগত প্রাঞ্জলতা ও অর্থগত সহজবোধ্যতা আনয়নের খাতিরে অনেক ক্ষেত্রে আক্ষরিকতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাংলা সংকলণটি ইংরেজী সংকলণ থেকে সামান্য সংশোধিত, পরিবর্ধিত ও পরিবর্তিত ।
আমার ধারণা এ অনুবাদ গ্রন্থটি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং তাদেরকে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত রূপ উপলব্ধিতে বিপুলভাবে সহায়তা করে বাঙালি জাতির জাগরণ ও উত্থানে উলেখ্য ভূমিকা রাখবে ।
সহ-লেখক, আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা
সম্পাদক, বঙ্গরাষ্ট্র (www.bangarashtra.org
& www.bangarashtra.net)
পাঠকের মন্তব্য
‘কোরানের উপর গভীর ও পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার ভিত্তিতে লেখক যথার্থরূপে দেখিয়েছেন যে ইসলাম – বিশেষ করে ইসলামের জিহাদ বা ধর্ম- যুদ্ধের মতবাদ – দ্ব্যার্থহীনভাবে অমুসলিমদেরকে জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও ক্রীতদাসকরণ এবং সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটি সাম্রাজ্যবাদী ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয় । তারপর নবি মুহাম্মদের আদি জীবনী (সিরা) ও হাদিসের উপর ব্যাপক গবেষণার ভিত্তিতে তিনি দেখান যে, আল্লাহর সেসব চিরন্তন ও অবশ্য করনীয় নির্দেশগুলো কীভাবে নবি নিজে প্রয়োগ করেছিলেন জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও ক্রীতদাসকরণ এবং আরবাঞ্চলে প্রথম সাম্রাজ্যবাদী ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে । প্রচুর ইসলামের ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে পুস্তকটি আরো দেখিয়েছে, কীভাবে মুসলিমরা জিহাদের এ আদর্শ নমুনা বা কর্মকান্ডগুলোকে বর্ধিত করে যুগ যুগ ধরে চলমান রেখেছে আজ পর্যন্ত । লেখক ভবিষ্যতবাণী করেছেন যে, আগামী দশকগুলোতে ইসলামি জিহাদ খুব সম্ভবত ক্রমান্বয়ে জোরদার ও উগ্রতর হয়ে উঠবে, যা মানবজাতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, বিশেষত অমুসলিম ও পশ্চিমা বিশ্বের জন্য ।
মুসলিম ও অমুসলিম বিশ্ব ইসলামি উগ্রবাদীদের কাছ থেকে যে ক্রমবর্ধমান সাংঘাতিক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তার সঠিক অনুধাবনে এ বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ।
– ইবনে ওয়ারাক, ‘আমি কেন মুসলিম নই' গ্রন্থটির লেখক
‘এটি একটি অবশ্যই পঠিতব্য বই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত সুন্দরভাবে লিখিত যা জিহাদের সহিংস সাম্রাজ্যবাদী প্রকৃতির উপর আলোকপাত করেছে । জিহাদ হলো ইসলামের প্রধান মতবাদ, যার প্রতিষ্ঠা সম্ভব কেবলই অমুসলিম, এমনকি মুসলিমদেরও মানবিক অধিকার পদদলিত করার বিনিময়ে।
— ননি দারবিশ, 'নাউ দে কল মি ইনফিডল' গ্রন্থটির লেখিকা
“আমার কাছে এ বইটি চমৎকার মনে হয়েছে । এটা এমন একটা বই, যা মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবারই পড়া উচিত... ‘ইসলামিক জিহাদ' গ্রন্থটি ব্যাপকভাবে ঐতিহাসিক অর্থে পূর্ণ, যা ইসলাম ও ইসলামের নবি সম্পর্কে বহু ঐতিহাসিক ও চলমান সত্যতার সঠিক আলোচনা করেছে । এসব কিছু বইটিকে অবশ্য পঠিতব্য করে তুলে তাদের জন্য, যারা চলমান ইসলামি জিহাদ ও সন্ত্রাসের পিছনের চালিকা শক্তিকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে চায়।'
- সামি আাবা, অধ্যাপক ও 'ভেইল্ড এ্যাট্রোসিটিজ' গ্রন্থটির লেখক
“বিশ্বব্যাপী চলমান জিহাদী আন্দোলনের ইতিহাস, প্রকৃতি ও হুমকি অনুধাবনে বর্তমানে যে গুরুত্বপূর্ণ ও বর্ধনশীল গবেষণা চলছে, এ গ্রন্থটি তাতে একটি বিশেষ সংযোজন মনে হচ্ছে।'
- মারভিন বেন্ডল, অধ্যাপক (জেইমস কুক ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া) ও লেখক
এম. এ. খানের এ বইটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ, সহজবোধ্য ও মনোযোগ আকর্ষণকারী। একবার পড়া শুরু করলে পাঠকরা বইটি শেষ করার আগ্রহ বোধ করবে । বইটি পড়ুন এবং অনুধাবন করতে পারবেন ইসলামি জিহাদীরা যা করছে তার কারণ কি! উপমহাদেশের (ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্থান) পাঠকরা, বিশেষত মুসলিমরা, হতবাক হয়ে যাবেন এটা অনুধাবন করে যে, তাদের পূর্ব-পুরুষরা কী ভয়ানক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য පි মধ্য-এশিয়া থেকে আগত মুসলিম হানাদারদের হাতে... পুস্তকটি আজকের রাজনৈতিক নেতৃবর্গের জন্য অবশ্য পঠিতব্য বর্ধনশীল ইসলামি উগ্রতা সম্পর্কে তাদের নিস্পৃহতা ছুড়ে ফেলতে ।’
- আবুল কাসেম, ইসলামের গবেষক, সমালোচক ও লেখক
লেখকের ভূমিকা
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে আমেরিকায় মুসলিম সন্ত্রাসীদের অবিশ্বাস্য ভয়ানক আক্রমণ (৯/১১ আক্রমণ) শুধু সমগ্র বিশ্বের গতিপথকেই ঘুরিয়ে দেয়নি, সেটা পাশ্চাত্যে বসবাসকারী মুসলিমদের জীবনধারা ও মানসিকতাকে সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত করে। এ ঘটনার ফলশ্রুতিতে তারা ধর্মীয় দিক থেকে ব্যাপক সমালোচনা ও ঝামেলার সম্মুখীন হয়। পশ্চিমা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রথমবারের মতো ইসলামের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে বিশ্বব্যাপী বর্ধনশীল মুসলিম উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসীদের জিহাদের নামে ঘটনকৃত সকল অপকর্মে ধর্মীয় উন্মাদনা দানের জন্য । হঠাৎ করে ইসলামের বিরুদ্ধে এরূপ জোর নেতিবাচক প্রচারণা পশ্চিমে বসবাসকারী মুসলিমদেরকে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা ও লজ্জার মধ্যে ফেলে দেয়।
৯/১১ আক্রমণ ঘটার পূর্বেই আমিও ছিলাম প্রায় এক দশক ধরে পাশ্চাত্যে বসবাসকারী এক মুসলিম, যাকে সে মানসিক যন্ত্রণা ও লজ্জার সম্মুখীন হতে হয় । যদিও আমার জন্ম ও লালন-পালন হয় রক্ষণশীল ইসলামি পরিবেশে, পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবে আমি বেড়ে উঠি উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে । স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জীবনে হিন্দু ও শিখরা ছিল আমার ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধবী: আমি তাদের মাঝে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম, কেননা তারা ছিল উদার, সহজগামী ও বির্ণীত মনের এবং কম ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন । বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করার পূর্বেই আমি সকল ধর্মীয় আচার-কর্ম ছেড়ে দিয়েছিলাম; সেগুলো আমাকে কোনোক্রমেই আকর্ষণ করতো না ।
-
৯/১১ আক্রমণ ঘটার সময় আমি পুরোপুরি অনুধাবণ করতে পেরেছিলাম যে, ধর্মীয় আনুষ্ঠিকতা, যেমন নামাজ, রোজা ও হজ্জ্ব ইত্যাদি সবকিছু অর্থহীন । মনে করতাম আমি পুরস্কৃত হবো কঠোর পরিশ্রমের জন্য, বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ কাজের জন্য অলস মুর্খের মতো কিছু ধর্মীয় আচার জীবনভর অনুকরণের জন্য নয়, যা কারো কোনোই উপকারে আসে না। অমুসলিমরা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু-বান্ধবী; মুসলিম সহকর্মীদেরকে আশ্চর্য করে দিয়ে আমি হারাম খাদ্য খেতাম, মাদকদ্রব্য পান করতাম পরিমিত পরিমাণে ।
আমার এ উদার মনোভাব ও আচার-আচরণ সত্ত্বেও সৎভাবে বলতে গেলে, আমি সেসব মুসলিমদের বাইরে ছিলাম না, যারা ৯/১১ আক্রমণকে ন্যায্য ভেবেছিল – যদিও আমার মনে হয়েছিল যারা আক্রমণটিতে মারা যায়, তারা ছিল নিষ্পাপ । আমার এরূপ ধারণার কারণ ছিল যে, মুসলিম সমাজ সর্বজনীনভাবে আমেরিকাকে ইসলামের চরম শত্রু বলে চিত্রিত করে, বিশেষ করে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে আমেরিকার ইসরাইল-মুখী অবস্থান নেওয়ার কারণে। মুসলিমরা ধারণা করে যে, আমেরিকার ইসরাইলকে সহায়তা প্রদান ফিলিস্তিনিদের উপর ব্যাপক অত্যাচার-নিপীড়ন ও দুঃখ-দুর্দশা বয়ে আনছে। কাজেই মুসলিমরা ৯/১১ আক্রমণকে ব্যাপকভাবে ন্যায্য ভেবেছিল, কেননা এ আক্রমণ অত্যাচারী মহাশক্তিকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে; এবং এতটা সামান্য মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আমিও সেরূপই ভেবেছিলাম ।
এটা বেখাপ্যা মনে হতে পারে যে, ইসলামের কোনো তোয়াক্কা না করলেও তখনো আমি ইসলামকে একটা সত্য ও ভাল ধর্ম বলে বিশ্বাস করতাম । আমি মনে করতাম ইসলামী জিহাদের নাম তুলে অপকর্ম ঘটনকারী মুসলিম সন্ত্রাসীরা ছিল বিপথগামী, যারা ইসলামের বা জিহাদের অপব্যাখ্যা করছে । তবে পশ্চিমা বার্তা-মাধ্যম যখন ৯/১১ আক্রমণসহ বিশ্বব্যাপী বিস্ফোরিত হয়ে পড়া মুসলিম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী করে ইসলামের সমালোচনায় ক্রমশ মুখর হয়ে উঠে, আমি তাদের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য ইসলামের ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহ, যেমন কোরান, হাদিস ও নবির জীবনী পড়তে শুরু করি, যা আমার ৩৫ বছর বয়সের জীবনে পূর্বে কখনো পড়িনি । সেগুলো পড়তে গিয়ে আমি হতচকিত হয়ে পড়ি । জীবনভর আমি শুনে এসেছি: নবি মুহাম্মদ ছিলেন একমাত্র আদর্শ মানুষ, তিনি ছিলেন সবচেয়ে দয়ালু ও ন্যায়বান, ইসলাম হলো সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ধর্ম, এবং আমি তার সবকিছু বিশ্বাস করে এসেছি । অথচ কোরানকে মনে হয় অমুসলিমদের বিরুদ্ধে লাগামহীন যুদ্ধের এক ঘোষণাপত্র (ম্যানিফেস্টো) তাদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরে বাধ্য করতে ও গণহারে ক্রীতদাস বানাতে অথবা জঘন্যভাবে নির্যাতিত ও অবমানিত জিম্মি প্রজা হিসেবে বশীভূত করতে । নবি মুহাম্মদ বিশেষত তার জীবনের ও নবিত্বের শেষ দশ বছরে আর যাই হোক শান্তি-প্রিয়, দয়াশীল ও ন্যায় ব্যক্তি ছিলেন না ।
তারপর ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটনে আমার উৎসুক্য বেড়ে যায় । বিগত বছরগুলোতে আমি ব্যাপক গবেষণা করেছি ইসলামি ধর্মীয় মতবাদ এবং নবি মুহাম্মদ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাসের উপর । ইসলামের সে ইতিহাস হলো জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, নিষ্ঠুর সাম্রাজ্যবাদ ও ধ্বংসাত্মক ক্রীতদাসত্ব চর্চার এক নির্মম কাহিনী । এটা মানব জাতির উপর নিপতিত নির্মমতার এক বিরল কাহিনী এবং তার সব কিছুই করা হয়েছিল ইসলামি ধর্মযুদ্ধ বা জিহাদের নামে, যা ইসলামের ভিত্তি স্থাপনকারী কেন্দ্রীয় মতবাদ । সে নির্মম কাহিনী, যার সাথে বর্তমান যুগের মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলেরই পরিচিতি সামান্য, তা এ পুস্তকটির বিষয়বস্তু ।
এম. এ. খান
১৫ অক্টোবর ২০০৯
লেখকের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
প্রথমত আমাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে আমার স্ত্রীর প্রতি, এ বইটি লিখা-কালীন তার অনুপ্রেরণা ও ধৈর্যশীল আত্মত্যাগের জন্য; তার সহায়তা ব্যতীত বইটি লিখা সম্ভব হতনা ।
বইটি মানবিক ও অতিমানবিক পন্ডিত ও গ্রন্থকারদের কৃতকর্মের ভিত্তিতে রচিত; কাজেই এর বেশীরভাগ অবদানের কৃতিত্ব তাদের উপর ন্যস্ত । তাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো কোরানের লেখক আল্লাহ; হাদিস সংগ্রহকারক আল-বুখারী, আবু মুসলিম ও আবু দাউদ; নবি মুহাম্মদের জীবনী লেখক ইবনে ইসহাক ও আল-তাবারী; এবং মোহাম্মদ ফেরিস্তা, ইবনে বতুতা, এইচ. এম. এলিয়ট ও জে. ডাউসন, জহরলাল নেহরু, কে. এস. লাল, জাইল্স মিল্টন, বার্নার্ড লুইস, ভি. এস. নৈপুল, জি. ডি. খোলা, পি. কে. হিট্টি, এম. উমরুদ্দিন, এন্ড্রু বস্টম, আর. এম. ইটন, বাহারিস্তান-ই-শাহী ও আল-বেরুনী'স ইন্ডিয়া ।
আমি কোনো অংশেই কম ঋণী নই আমার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী আবুল কাসেম, মোহাম্মদ আজগর, সাঈদ কামরান মির্জা, শের খান, মুমিন সালিহ, সি. লী, উয়ার্নার ম্যাকেনজি ও আরো অনেকের কাছে, যারা আমাকে ব্যাপক প্রেরণা দিয়েছে বইটি সম্পন্ন করণে । বিশেষ ধন্যবাদের দাবীদার হলো সি. লী, যে তার সংগ্রহকৃত বইয়ের ভাণ্ডারটি আমাকে ব্যবহার করতে দেয়, যা আমার গবেষণায় খুবই সহায়ক হয়েছে।
বইটিতে আলোচিত বিষয়গুলোর আবেদন সার্বজনীন, যদিও ঐতিহাসিক তথ্য ব্যাপকভাবে উল্লেখিত হয়েছে প্রধানত ভারতবর্ষ থেকে, বিশেষত দু'টি কারণে: প্রথমত, ভারতে ইসলামি শাসনকালের বহু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় তৎকালীন মুসলিম ইতিহাসবিদদের লেখা থেকে; দ্বিতীয়ত, বইটির পরিসর ছোট রাখার জন্য। তবে বইটি পাঠের সময় পাঠকদেরকে মনে রাখতে হবে যে, ভারতে অমুসলিমদের প্রতি মুসলিম শাসকদের আচরণ ছিল সবচেয়ে নমনীয়; অন্যত্র তা ছিল আরো জঘন্য, কদাচিৎ ব্যতিক্রম ছাড়া (যেমন স্পেনে) ।
এম. এ. খান ১৫ অক্টোবর ২০০৯
প্রকাশকের ভূমিকা
ইসলামের প্রাণশক্তির উৎস হচ্ছে জিহাদ । এই জিহাদের মাধ্যমে মদিনা থেকে তার বিজয়ী রূপে আত্মপ্রকাশ, প্রসার এবং প্রতিষ্ঠা। জিহাদের তাৎপর্য বাস্তবে হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্মের নামে যুদ্ধ এবং আরব সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ। জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী আরব রাষ্ট্রের প্রসারের সঙ্গে ঘটেছে ধর্মের নামে পাইকারীভাবে পরের সম্পদ ও সম্পত্তি লুণ্ঠন ও আত্মসাৎকরণ, নারী ধর্ষণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরকে ‘কাফের” বা “সত্য প্রত্যাখ্যনকারী' আখ্যায়িত করে আক্রমণ ও পরাজিত করে বন্দী ও দাসকরণ। এভাবে ইসলামে ধর্মের নামে জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, আরব সাম্রাজ্যবাদ এবং দাস ব্যবস্থার যে ঐতিহ্য বা উত্তরাধিকার গড়ে উঠেছে তাকে এই গ্রন্থে লেখক অজস্র তথ্যের সাহায্যে উদ্ঘাটিত করেছেন । জিহাদের উপর বিপুলভাবে তথ্যসমৃদ্ধ এ অসাধারণ গ্রন্থটি M. A. Khan-এর লেখা Islamic Jihad: A Legacy of Forced Conversion, Imperialism, and Slavery নামক ইংরেজি গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ। যেহেতু জিহাদের সঙ্গে ইসলাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং বাঙালি পাঠকদের নিকট জিহাদকে আলাদাভাবে ইসলাম শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করার প্রয়োজন হয় না সেহেতু গ্রন্থের নাম অনুবাদের সময় ইসলামি জিহাদ নামকরণ না করে শুধু জিহাদ করা হয়েছে ।
আমার ধারণা এই অনুবাদ গ্রন্থটি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং তাদেরকে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত রূপ উপলব্ধিতে বিপুলভাবে সহায়তা করে বাঙালি জাতির জাগরণ ও উত্থানে উল্লেখ্য ভূমিকা রাখবে ।
শামসুজ্জোহা মানিক সহ-লেখক, আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা সম্পাদক, বঙ্গরাষ্ট্র (www.bangarashtra.org
& www.bangarashtra.net)