অনুতপ্ত
হও। কেয়ামত সন্নিকটে। কেয়ামতের
সময়কাল একেবারেই দোরগোড়ায়,
এটা এতটাই
দৃঢ়ভাবে মুহাম্মদ বিশ্বাস
করতেন যে, তিনি
পারলে সেই সাদা দাড়িওয়ালা
বৃদ্ধটির মতো কেয়ামতের
সতর্কবাণীর চিহ্ন নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি তার
আরব সমসাময়িকদের উদ্দেশ্যে
এই বার্তাটি চেঁচিয়ে বললেন
: “আমাদের
উপর অশুভ ভর করেছে,
কেয়ামতের
দিন ঘনিয়ে আসছে, জাহান্নামের
রক্ষীরা দরজা খুলে ফেলেছে!
যদি তোমরা
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন কর এবং পাপসমুহের
জন্য অনুশোচনা কর, তবে
জাহান্নামের চিরস্থায়ী আগুন
থেকে রক্ষা পাবে!”
মুহাম্মদ বিশ্বাস করতেন তিনি স্রেফ কেয়ামতের ঘোষক বা শেষ সময়ের (আখেরি জামানা) বার্তাবাহকই নন; তিনি হলেন এই সতর্কতাসমুহ নিয়ে আসা বার্তাবাহক বা নবীদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি। তিনি আল্লাহর প্রেরিত রাসুলগণের সেই দীর্ঘ সারির একেবারে চূড়ান্ত ব্যক্তি ছিলেন, কারণ ধ্বংসের 'শেষ' খুব দ্রুতই এগিয়ে আসছে। ফেরেস্তারা ইতিমধ্যে শিঙা বাজানোর জন্য পৌঁছেছিলেন। সতর্কঘন্টা বাজানোর জন্য আর কারও প্রয়োজন হবে না।
তিনি
সকলকে এই কথাটি বলেছিলেন এবং
সময়সীমার বিষয়ে তিনি
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি
নিশ্চিত ছিলেন, তার
মৃত্যুর পর কেয়ামত ঘটতে খুব
বেশি সময় বিলম্ব হবে না। সেই
থেকে শেষ সময়ের লক্ষণগুলি
শুরু হবে। কিছু যাযাবর একবার
এই প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসা
করার জন্য তার মসজিদে এসেছিল।
নামাজের জায়গাগুলিতে তারা
যখন হাঁটু ভাঁজ করে বসেছিল
তখন তারা বলল, “হে
আল্লাহর রাসুল, কেয়ামত
(শেষ সময়
বা মহাপ্রলয়) কখন
আসবে?” মুহাম্মদ
তাদের সাথে থাকা একটি শিশুর
দিকে ইশারা করে বললেন,
“যদি এই ছোট্ট
ছেলেটি বেঁচে থাকে তবে কেয়ামত
পেতে তাকে বেশি বৃদ্ধ হতে হবে
না”(১)।
মুহাম্মদ
ছিলেন একজন সহজাত প্রবৃত্তিসম্পন্ন
প্রভাব বিস্তারকারী। তিনি
তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে মানব
প্রকৃতির স্বরূপ বুঝতে পারতেন
এবং তার প্রাথমিক অভিজ্ঞতার
ময়দান মক্কা থেকেই তিনি
জানতেন যে, মানুষের
ভেতরে ভয় সৃষ্টি করা হচ্ছে
মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার
প্রথম পদক্ষেপ। এই ভয় সৃষ্টি
করার কৌশল তখন তার অনুসারীদের
ছোট গোষ্ঠীর বেলায় কাজ করেছিল,
এবং এটি এখন
আরো বৃহত্তর গোষ্ঠীগুলোর
ক্ষেত্রেও বেশ কাজ করছে। এটি
কাজ করেছিল, কারণ
তিনি নিজের কল্পনাগুলিকে
বিশ্বাস করেছিলেন এবং অন্যান্য
লোকজনদেরও বোঝানোর মতো
কল্পনাশক্তি ও শৈল্পিকতা তার
মধ্যে ছিল। ভয় সৃষ্টি করা
এবং সেই ভয়ের সাথে যে নিয়ন্ত্রণের
নাটাই মুহাম্মদের হাতে চলে
আসত তা ধরে রাখার জন্য তিনি
কখনও কখনও একটানা ভীতি সঞ্চারের
আবহ তৈরি করতেন যার প্রতিপাদ্য
ছিল সময়ের সমাপ্তি,
কেয়ামতের
আগমনের চিত্র এবং যারা তাকে
বিশ্বাস করে না তাদের জন্য
নরকের আগুন। এই মাহফিলগুলোর
(ধর্মসভার)
উদ্দেশ্য ছিল
ভবিষ্যত নিয়ে অজানা ভয়
ছড়িয়ে দেয়া। তিনি একটানা
আশা সঞ্চার সম্পর্কিত মাহফিলগুলো
পর্যালোচনা করতেন, যেগুলো
তাদের মধ্যে তৈরি হওয়া ভয়
থেকে আবার মুক্তির পথ বাতলে
দিত – আর এটি হচ্ছে মানুষের
উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জনের জন্য
দ্বিতীয় ধাপ। এটি হচ্ছে সেই
ঝানু পণ্য বিক্রেতার একের
ভিতর-দুই
কৌশলের মতই - প্রথমে
ভয় দিয়ে দিয়ে ক্রেতার হৃদয়
অস্থির করে ফেল, তারপর
সেটি থেকে তাদের মুক্তির পথ
বাতলে দাও।
-
তিনি
যখনই কোনও ভীতি সংক্রান্ত
বয়ান করতেন, এটি
সারাদিন এবং সারারাত ধরে চলত
এবং এটি তার অনুসারীদের শারীরিক
ও মানসিকভাবে ক্লান্তির
চূড়ান্তে নিয়ে যেত। ইসলামের
গ্রন্থে এরকম একটি অধিবেশনের
কথা বলা হয়েছে, যা
ভোরের আলো ফোটার আগে শুরু
হয়েছিল (২)।
দু'দফায়
প্রার্থনা করার পরে মুহাম্মদ
নিজেকে মিম্বারের আসনে বসালেন
এবং সেখান থেকে তিনি বিশ্বস্তদেরকে
ভবিষ্যতের জন্য কি অপেক্ষা
করছে তা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বয়ান
করলেন। দুপুরে বিলালের
বাধ্যতামূলক নামাজের আহবানের
আগ পর্যন্ত তিনি বলতেই থাকলেন,
মাঝেমধ্যে
শুধু প্রশ্ন আহ্বান করছিলেন।
এরপর তিনি মিম্বার থেকে নেমে
এসে নামাজের স্থানে এলেন,
মুমিনদের
উদ্বেগ-প্রশমনমূলক
কর্মকাণ্ডের আরও কয়েকটি
মাহফিলের নেতৃত্ব দিলেন,
তার জন্য উপযুক্ত
যে আয়াতগুলি আবশ্যক তা
তিলাওয়াত করলেন, তারপরে
মিম্বারে এসে আবার তার বয়ান
শুরু করলেন। তিনি এটি পুরো
দিন জুড়েই চালালেন,
নেমে এসে বিকেলের
নামাজ পড়ালেন অন্ধকার হওয়ার
আগে, তারপর
আবারো অন্ধকার না নামা পর্যন্ত
শুরু করলেন।
এই
বিভীষিকাময় মাহফিলগুলোর
মধ্য দিয়ে মুহাম্মদ যেন
দক্ষিণাঞ্চলীয় পুনর্জাগরনবাদী
বিলি সানডে (Billy Sunday) হয়ে
উঠতেন, যিনি
তার ধর্মসভার সবাইকে নরকের
আগুনের ভয়াল বর্ণনা শোনাতেন।
মুহাম্মদ বর্ণনা করতেন কিভাবে
চরম বিভীষিকাময় সময় অপেক্ষা
করছে নিকৃষ্টদের জন্য,
আর তাদের ভাগ্যে
কি আছে তা জানতে তাঁকে প্রশ্ন
করতে আহবান করতেন। তিনি বলতেন,
“এই ব্যাপারে
আমাকে জিজ্ঞেস কর, আমাকে
জিজ্ঞেস কর”। একটা মাহফিলে
এক লোক তার পায়ে লাফিয়ে পড়ে
জিজ্ঞেস করল, “হে
আল্লাহর রাসুল, আমার
ঠিকানা কোথায় হবে?”
মুহাম্মদ তাকে
আর তার মত যারা জানতে চাইত
তাদেরকে চিৎকার করে বলতেন,
“জাহান্নামে!”
তিনি চেঁচিয়ে বলতেন, “আমাকে জিজ্ঞাসা কর! আমাকে জিজ্ঞাসা কর!” অন্য কেউ যখন কথা বলার সাহস করত না, তিনি চিৎকার করে উঠতেন, “আমি প্রার্থনা করার সময় জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সামনে এই প্রাচীর জুড়ে প্রদর্শিত হয়েছিল”। তিনি মসজিদের একটি দেয়ালের দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং গুরুগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন, “আজকের মতো ভালো-মন্দ আমি আর কখনও দেখিনি”। এরপর তিনি তাঁর সাহাবিদের দিকে তাকিয়ে বললেন “আমাকে জিজ্ঞাসা কর! আমাকে জিজ্ঞাসা কর!” তিনি কেবল জ্বলন্ত মাংসের গন্ধই নয়, বরং তাদের নিজেদের মাংস পোড়ানোর গন্ধ শুকাতেন। তিনি তাদের কেবল যন্ত্রণার আর্তনাদ শুনাতেন না, তাদের নিজেদের গলা দিয়ে যন্ত্রণার চিৎকার বের করে আনতেন। লোকেরা এত ভয় পেত যে, তারা মাটিতে গড়িয়ে পড়ত আর অবিরত কান্না করত। এমনকি দুঃসাহসী উমরও ভয়ে কাতর হয়ে থাকতেন। তারপর তিনি হাঁটু ভেঙ্গে বসতেন এবং কাঁদতেন, আর বেহেশতে লাভের নিশ্চয়তা প্রদানকারী কথাগুলো বললেন : “আমরা আল্লাহকে আমাদের রব হিসেবে এবং ইসলামকে আমাদের ধর্ম হিসেবে এবং মুহাম্মদকে আমাদের রাসুল হিসেবে গ্রহণ করি!” (৩)
তবে
এই ঘটনাগুলি ছাড়িয়ে যায়
বিশ্বাসীদের এই সন্তুষ্টিমূলক
অনুভূতি যে, তারা
আল্লাহর রাসুলের মুখোমুখি
বসে আছে, তারা
মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ
রাব্বুল আলামিনের সিংহাসনের
সামনে তলব করা ব্যক্তিটির
কথা শুনার সুযোগ পাচ্ছে। তারা
নিশ্চিত ছিল যে, তারা
তার কাছ থেকে যা শুনছিল তা
আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে।
এটি ছিল তাদের উপকারের জন্য,
তাদের নৈতিক
উন্নয়নের জন্য, তাদেরকে
জাহান্নামের অতল গহ্বরে
প্রজ্বলিত হওয়া থেকে বাঁচানোর
জন্য। অবশেষে যখন একটানা
বয়ানগুলো বন্ধ হতো তাদের
ছেড়ে দেয়া হত। পরদিন ভোরে
নামাজের জন্য না ডাকা পর্যন্ত
তারা বাসায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত
একটা ঘুম দিত।
মুহাম্মদ
কেয়ামতের বিষয়ক গল্পগুলির
প্রথম এবং দৃঢ়চেতা একজন
বিশ্বাসী ছিলেন এবং সেই চিন্তা
তার মনের পুরোটাই দখল করেছিল।
তিনি কিয়ামতের দিন নিয়ে
এতই ভাবতেন যে, এমনকি
এ সম্পর্কে তার দুঃস্বপ্নও
হত। একরাতে পালকপুত্ৰ জায়েদের
প্রাক্তন স্ত্রী, জয়নাব
বিনতে জাহশ (Zaynab bint Jahsh) (8) এর
সাথে শুয়ে থাকার সময় তিনি
উত্তেজিত হয়ে জেগে উঠলেন,
তার মুখটিও
রক্তিমাকার হয়ে গিয়েছিল।
জয়নব হতবাক হয়ে গেলেন,
আর মুহাম্মদ
চিৎকার করে বললেন : “আরবের
জন্য ধ্বংস অপেক্ষা করছে!
কারণ,
অশান্তি ও
ইয়াজুজ-মাজুজের
(Gog and Magog) বাধন
খুলে গেছে” (৫)।
এই ঘোষণাটি তার পৌরাণিক এক বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ছিল। পৌরাণিক গল্পে বলা হতো, অনেক দূরে পূর্বদিকে বরফের একটি অঞ্চলে, সম্রাট যুল কারনেইন (Alexander the Great) একটি বর্বর গোষ্ঠীকে লোহার প্রাচীরের আড়ালে বন্দি করে রেখেছিল। সেখান থেকে তাদের পালিয়ে যাওয়া হবে কেয়ামতের নির্দেশক। মুহাম্মদের স্বপ্নে সেই প্রাচীরটিতে ফাটল ধরেছিল, আর বর্বরদের বিশাল দলটি সেদিকে ছুটে যাচ্ছিল। ফাটলটা কেমন তা বোঝাতে তিনি তার হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল আর তর্জনীর মাধ্যমে একটা বড় ও (O) আকার করে জয়নাবকে দেখালেন। আর বেশি দেরি নেই যখন এই জাহান্নামীরা (ইয়াজুজ-মাজুজ) আরব মরুভূমিতে হুঙ্কার দিয়ে বেড়াবে। তিনি বললেন যে, স্বপ্ন মিথ্যা বলে না এবং বোঝালেন যে, তার স্বপ্নটিতে স্পষ্ট প্রমাণ ছিল কেয়ামত সন্নিকটে।
যখন তার উপদেশগুলি শাস্তি ও নিন্দায় ভরে উঠত, তখন তিনি প্রায়শই ক্রোধে ফেটে পড়তেন। একসময় তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, “আমি তোমাদের আগুন সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি!” মসজিদ থেকে সামান্য দূরের বাজারেও তার কণ্ঠ শোনা যেত। তখন তার শরীর এত জোরে কেঁপে উঠল যে, কাঁধের উপরের পোশাকটি মাটিতে পড়ে গেল (৬)। কেয়ামতের জন্য কি অপেক্ষা করছে তা বলার সময় তার কণ্ঠ ক্রোধে কাঁপছিল। তিনি বললেন, দোযখের আগুন এমনই হবে যে সেখানে থাকা মানুষের পায়ের চটির ফিতা আগুনের তৈরি হবে, যার উত্তাপ মাথার ভেতরের মগজকে সেদ্ধ করবে। যদিও এই ব্যক্তিটির শাস্তিটি হচ্ছে সর্বনিম্ন শাস্তি তবুও মনে হবে তার মত এত মারাত্মক যন্ত্রণায় হয়তো আর কেউ নেই(৭)।
মসজিদের
মঞ্চে দেয়া টানা বয়ানগুলোর
সময় মুহাম্মদ ছিলেন পুরোদস্তর
অভিনেতা। তিনি বয়ানের গতি
ক্রমশ বাড়াতেন, কমাতেন,
তর্জনীটি
উঁচিয়ে আর কপাল কুঁচকে
শ্রোতাদের দিকে তাকাতেন। তার
টানা খুতবা শুরু হত মুমিনদের
আসন্ন কেয়ামতের বিষয়ে
ছোটখাটো আলামত বলার মধ্য দিয়ে
: ব্যাপক
হত্যাযজ্ঞ আর মারামারির যুদ্ধ
হবে, ভূমিকম্পের
মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক
বিপর্যয় সবকিছুকে মাটিতে
মিশিয়ে দেবে; প্রচণ্ড
আগুন পাহাড় এবং বৃক্ষরাজিকে
পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলবে।
যখন পরিস্থিতি একেবারেই খারাপ
হয়ে উঠবে ঠিক তখনই পরিস্থিতি
একটু ভালো হয়ে উঠবে,
তবে তারপরে
আরও একটি ঘটনা ঘটবে যা দেখে
জীবিতরা মৃতদের হিংসা করবে।
মুমিনরা মুমিনদের সাথে লড়াই
করবে, তীর্থযাত্রীদের
(হজ্বযাত্রী)
মালামাল লুট
করা হবে এবং তাদের হত্যা করা
হবে, পবিত্র
পাহাড়গুলোতে লড়াই হবে এবং
শৃঙ্খলা রূপ নেবে বিশৃঙ্খলায়।
এই তান্ডবের মাঝে ফোরাত
(Euphrates) থেকে
সোনার পাহাড় উত্থিত হবে,
এবং শতশত স্বর্ণ
সন্ধানকারীদের মধ্যে একজন
ছাড়া আর সবাইকেই সীমাহীন
লোভ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে ন্যায়ের
পথপ্রদর্শক, মুহাম্মদের
রক্তের বংশধর, তার
সাথে আশ্চর্য সাদৃশ্যপূর্ণ
ইমাম মাহদীর (Imam Mahdi) আবির্ভাব
ঘটবে। তিনি আসবেন ইয়াছরিবে
যখন তার বয়স হবে চল্লিশ,
আর তিনি হবেন
ইসলামের শেষ আশা-ভরসা
(৮)।
মুহাম্মদ
বলেছেন, মাহদীর
প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে আবু
সুফিয়ানের (Abu Sufyan) এক
বংশধরকে মোকাবেলা করা,
যিনি দামেস্কে
তার ঘাঁটি থেকে অরাজকতা ও
অপরাধ ছড়িয়ে দেবেন। তিনি
এমন নিষ্টুর হবেন যে,
শিশুদের হত্যা
করবেন এবং গর্ভবতী নারীদের
পেট চিঁড়ে ফেলবেন (৯)।
সুফিয়ানি (Sufyani) নামে
ডাকা এই আবু সুফিয়ান,
মাহদীর আবির্ভাব
সম্পর্কে জানতে পারবে এবং
তাকে হত্যা করার জন্য একদল
সেনা পাঠাবে, তবে
তার এই বাহিনীকে মরুভূমি গ্রাস
করবে। প্রায় একই সময়ে খিলাফতের
উত্তরাধিকারের যুদ্ধও হবে।
মাহদী হবেন একজন দোনোমনা শাসক;
তিনি এই সুফিয়ানী
আক্রমণের আগেই মক্কায় পালিয়ে
যাবেন এবং মক্কায় তার সভাসদেরা
তাকে খলিফার দায়িত্ব দেয়ার
জন্য তার ঘর থেকে কাবার দিকে
টেনে আনবেন, যেখানে
তারা কালো পাথরের (হাজারে
আসওয়াদ) সামনে
তার প্রতি আনুগত্যের শপথ করবে।
তাকে ডাকা হবে পথের দিশারী
বলে এবং লোকজন তাঁর আনুগত্য
মেনে নেবে। তারপর তিনি জোট
গঠন করবেন এবং মুরতাদ এবং
খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে
বিশ্বাসীদের (মুসলিমদের)
নেতৃত্ব দেবেন।
মুহাম্মদ
সকালের অধিবেশন চলাকালীন এই
ইমাম মাহদীর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী
প্রকাশ করতেন। ঈমানদারগণ
আচ্ছাদিত প্রার্থনার স্থানের
পুরোটা জুড়ে হাঁটু ভাঁজ করে
সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন সারিতে
বসে থাকতেন এবং অনেক সময় তা
পেরিয়ে বাইরের বিশাল আঙ্গিনায়
পর্যন্ত গিয়ে ঠেকত। দুপুরের
নামাজের আহবানে, তিনি
জামাতের ইমামতি করার জন্য
সামনের খালি জায়গায় চলে
আসতেন এবং সর্বদা নিখুঁতভাবে
আয়াত বলে সেজদার মাধ্যমে
নামাজ শেষ করতেন। তারপরে তিনি
আবার খুৎবার মিম্বারে ফিরে
এসে বয়ানের জন্য প্রস্তুতি
নিতেন। তার পাগড়িটি শক্তভাবে
তার মাথায় জোড়ানো ছিল,
আর পাগড়িটির
কিছু অংশ ছিল কাঁধে ঝোলানো।
ভবিষ্যতের দৃশ্যপট তার মস্তিষ্কে
গেঁথে নিতে তিনি তার মিম্বারের
আসনে দু'চোখ
বন্ধ করে বসেন। সমস্ত প্রতিভাধর
সাধকদের মতো তার মাঝেও নাটকীয়তা
ছিল। তার মনে আসা দৃশ্যগুলোকে
কথায় প্রকাশের সাথে সাথে,
তাতে জোর আরোপ
করতে তিনি মিম্বারের বাহুতে
স্বীয় হাত মুষ্টিবদ্ধ করে
চাপ দিতেন; তিনি
উপরের দিকে অদৃশ্য শক্তির
দিকে নির্দেশ করতেন,
আল্লাহর কাছে
দু হাত তুলে প্রার্থনা করতেন,
শরীরের পশ্চাদ্দেশ
দিয়ে কাঠের মেঝেতে আঘাত
করতেন, অনেক
সময় অনুসারীদের উজ্জীবিত
করতে তিনি লাফিয়ে উঠতেন।
নিজের কোমরে হাত রেখে তিনি
সামনে বেঁকে গিয়ে সমাবেশের
উদ্দেশ্যে আলঙ্কারিক প্রশ্নসমূহ
ছুঁড়ে দিতেন, শুধুমাত্র
নিজে উত্তর দেয়ার জন্য,
অথবা তিনি
সামনে পেছনে স্ফীত হয়ে বেহেশতের
উদ্দেশ্যে তীব্র আবেগে কেঁপে
কেঁপে কথা বলতেন। মুমিনরা
তাদের মুখ এবং চোখ একেবারে
স্থির রেখে মুখ হা করে তার কথা
শুনত।
মুহাম্মদ তাদের বলেন যে, নিকটতম ভবিষ্যতে কেয়ামতের অন্যতম প্রথম আলামত হবে মাহদীর শাসন। যিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন এবং মরিয়মের পুত্র যীশুর পৃথিবীতে পুনরায় আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবেন। একই সময়ে একজন ধুরন্ধর প্রতারক, প্রচণ্ড শক্তিশালী যীশু-বিরোধী ভুয়া নবী দাজ্জালের (Dajjal) আবির্ভাব ঘটবে। সিরিয়া এবং বাইজান্টাইনের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে মাহদীর নেতৃত্বে একটি বাহিনী এগিয়ে যাওয়ার পরেই বিশ্বে দাজ্জালের উপস্থিতির গুজব ছড়িয়ে পড়বে, যদিও তার এক তৃতীয়াংশ যোদ্ধাকে হত্যা করা হবে এবং অন্য এক তৃতীয়াংশ প্রস্থান করবে। বিশাল সিরিয়ার সেনাদলর বিরুদ্ধে মাহদীই বিজয়ী হবেন, এবং তারপরে তিনি কনস্ট্যান্টিনোপলের (Constantinople) দিকে তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে যাবেন। সেখানে তার সৈন্যরা একযোগে চিৎকার করবে: “আল্লাহু আকবর!” এবং তখন কনস্ট্যান্টিনোপলের দেয়ালগুলি ভেঙে পড়বে। কিন্তু মাহদী তার বিজয় উপভোগ করতে পারবেন না, কারণ সেই মুহুর্তে এমন কথা শোনা যাবে যে দাজ্জাল সিরিয়ায় হাজির হয়েছে এবং মায়াজাল ও জাদুকরী কথার মাধ্যমে লোককে তার মিথ্যা ধর্মের দিকে প্ররোচিত করছে।
মুহম্মদের
বর্ণিত শেষ সময়ের পরিস্থিতি
যেন হলিউডের মহাকাব্যের একটি
পান্ডুলিপির মতো ছিল,
যার মাঝে থাকত
অনেক অভিনেতা এবং বিশেষ কারিগরি
চমকও। যেমন, বাম
চোখ অন্ধ এবং ঘন লোমশ শরীরের
দাজ্জাল সিল্ক পরিহিত থাকবে
আর তার হাতে থাকা ধারালো তলোয়ার
সহ সত্তর হাজার ইহুদি নিয়ে
পারস্য থেকে সে এগিয়ে আসবে।
সেই শয়তান তথা দাজ্জালের পা
থাকবে বাঁকানো এবং তার কপালে
ছাপ মারা থাকবে 'কাফির'
শব্দের নির্দেশক
তিনটি আরবি অক্ষর। সে একটা
বিশাল খচ্চরের উপর খুব দ্রুতগতিতে
চলা, একেবারে
মুহাম্মদকে মক্কা থেকে
জেরুজালেমে নিয়ে যাওয়া
শক্তিশালী প্রাণী বুরাকের
চেয়েও দ্রতগতিতে ছুটে চলা
বিশাল এক খচ্চরের উপর চড়ে
অভিযানে বেরোবে সে। দাজ্জালের
হাতের স্পর্শে আগুন হয়ে যাবে
জল এবং জল হয়ে যাবে আগুন। তার
সাথে বাদ্যযন্ত্র থাকবে এবং
তিনি সংগীতপ্রেমীদের বিমোহিত
করার জন্য সুন্দর সংগীত তৈরি
করবেন। তিনি তার যাদুকরী
কৌশলের মাধ্যমে আরও বেশি লোককে
তার অনুসরণ করতে প্রভাবিত
করবেন, এবং
মনে হবে যেন সবই অলৌকিক। মঞ্চে
দেখানো কৌশলগুলির মধ্যে একটিতে
একজন ব্যক্তিকে কেটে অর্ধেক
করা হবে, আর
পরে তাকে আবার জীবিত করা হবে।
অন্য আরেকটিতে তিনি মৃত পিতা
এবং তার ভাইয়ের জীবন ফিরিয়ে
আনবেন, তবে
বাস্তবে ওরা তাদের রূপ নেয়া
শয়তান হবে। সেখানে কোন জাদু
নেই, কেবলই
প্রতারণা! এবং
সবচেয়ে খারাপ ধরনের ছলনাও,
কারণ এটি লোকেদের
জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে!
দাজ্জাল তখন
মুহাম্মদের ধর্মের সত্যিকারের
বিশ্বাসীদের দেশে খরার সৃষ্টি
করবেন, কিন্তু
তিনি তার নিজের অনুসারীদের
প্রাচুর্যে ভরে দেবেন। তিনি
যে শক্তি অর্জন করেছিলেন তাতে
উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি ইয়াছরিব
ও মক্কায় আক্রমণ করবেন,
কিন্তু সেখানের
সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা
ফেরেস্তাদের সাথে তিনি শক্তিতে
কুলিয়ে উঠতে পারবেন না। তাদের
শক্তি দেখে হতাশ হয়ে দাজ্জাল
সিরিয়ায় ইমাম মাহদীর সাথে
শক্তি প্রদর্শনের জন্য উত্তরের
অভিমুখে তার বাহিনীকে নেতৃত্ব
দেবেন।
মুহাম্মদ আরও একটি নামাজ বিরতি নিলেন, এটি বিকেলের নামাজের জন্য। নিখুঁত প্রার্থনায় সিজদা এবং সুরেলা কন্ঠে আয়াতগুলির তেলাওয়াত শেষে, মুমিনদেরকে যীশুর প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে জানাতে তিনি সমাবেশের খালি জায়গা থেকে মঞ্চে এসে উঠলেন। খ্রিস্টানদের দাবি করে যীশু ক্রুশে নিহত হয়েছেন, কিন্তু এটি সঠিক নয়, বরং তাঁকে শেষ নৈশভোজের সময়ে ভোজকক্ষের ছাদের একটি ফুটো দিয়ে বেহেশতে (স্বর্গে) তুলে নেয়া হয়েছিল। দাজ্জালকে পরাভূত করাই মরিয়মের পুত্র যীশুর অন্যতম উদ্দেশ্য, যে দাজ্জাল এখন সিরিয়ায় ইমাম মাহদীকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন। জাফরানের হালকা রঙিন পোশাক পরে যীশু বেহেশত থেকে নেমে আসবেন। হয় তিনি মেঘের উপর নেমে আসবেন অথবা দু'জন ফেরেস্তার কাঁধে হাত রেখে নামবেন। যদি তিনি স্বর্গদূতদের সাথে অবতীর্ণ হন তবে তারা তাকে দামেস্কের একটি মসজিদের কাছে নামিয়ে দেবেন, যেখানে ইমাম মাহদী ফজরের নামাজে আটশোত পুরুষ এবং চারশো নারী সহ মোট বারোশত ঈমানদার মুমিনের নেতৃত্ব দেবেন। মাহদী প্রার্থনা শুরু করার আগমুহুর্তে যীশু পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করবেন এবং মুমিনরা তখন তাদের মনের মধ্যে একটি আওয়াজ শুনবে। তারা শুনবে, “তোমাদের আবেদন যিনি শুনবেন তিনি এসেছেন!” যীশু নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেবেন, মাহদী তাকে নামাজের ইমামতি করার জন্য অনুরোধ করবেন, কিন্তু যীশু সম্মানের সাথে তাতে অমত করবেন এবং তাকেই ইমামতি চালিয়ে যেতে বলবেন। নামাজের পরে যীশু ঘোষণা করবেন যে, সবেমাত্র দামেস্কের দরজায় পৌঁছে যাওয়া দাজ্জাল শীঘ্রই মরবে। যীশুকে কেবল নিঃশ্বাস ফেলতে হবে, আর যতদূর চোখ যাবে তার প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে কাফেরদের লাশ পড়বে। যীশু দামেস্কের দরজায় যাবেন। তার নিঃশ্বাসের প্রভাবে প্রকৃত মুমিনরা পর্বত থেকে নেমে আসবে, এবং তারা দাজ্জালের বাহিনীকে ধ্বংস করবে। বর্ম পরিহিত হয়ে এবং দুটি তলোয়ার ও একটি ঢাল নিয়ে যীশু যুদ্ধের ময়দানে ধীরে ধীরে দাজ্জালের দিকে এগিয়ে যাবেন। তিনি শহরের একটি দরজার সামনে চুড়ান্ত মোকাবেলা করে তাকে মেরে ফেলবেন এবং শয়তানের রক্তে তার ঢালটি রাঙিয়ে তারপর যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে যাবেন।
অবশেষে
দাজ্জালের সমস্ত অনুসারী
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং এরপরে
যীশু পৃথিবীর সমস্ত শুকর সহ
ঘৃণ্য প্রাণীদেরকে মেরে
ফেলবেন, কারণ
তারা নিজেদের মলমুত্র খায়।
তিনি তার সম্পর্কে তৈরি হওয়া
নকল ধর্মের ক্রসকেও ধ্বংস
করবেন যে ধর্মে তার সমন্ধে
ভুলভাবে বলা হয়েছে যে,
তিনি ক্রুশে
মারা গিয়েছিলেন এবং তাকে
পুনরুত্থিত করা হয়েছিল। অথচ
সত্যিটা হচ্ছে, তার
জায়গায় অন্য কেউ একজন
স্বেচ্ছায় মারা যেতে এগিয়ে
এসেছিল। যীশু এটি পরিষ্কার
করে দেবেন যে, তিনি
নশ্বর, তিনি
আল্লাহর রাসুল মাত্র,
যেই সত্যকে
ইহুদিরা অস্বীকার করেছিল।
দাজ্জালের হত্যার পর খুব
শীঘ্রই ইমাম মাহদী মারা যাবেন
এবং যীশু তখন খলিফা তথা মুমিনদের
সর্বাধিনায়কের ভূমিকা গ্রহণ
করবেন। যীশু মুহাম্মদের কবর
জিয়ারত করবেন যেখানে তিনি
ঈশ্বরের শেষ ও চূড়ান্ত রাসুলকে
শ্রদ্ধা জানাবেন।
তবে
দাজ্জালের মৃত্যু সত্ত্বেও
সবচেয়ে খারাপ সময় শেষ হয়নি।
আল্লাহ যীশুর সামনে চ্যালেঞ্জ
ছুঁড়ে দিতে থাকবেন। একপর্যায়ে
আল্লাহ তাকে জানিয়ে দেবেন
যে, তিনি
ইয়াজুজ এবং মাজুজের বাসিন্দাদের
তাদের দূরবর্তী লোহার কারাগার
থেকে মুক্তি দিচ্ছেন এবং তারা
তাদের সমস্ত ক্রোধ নিয়ে
এগিয়ে যাবে। তারা এতবড় একটি
সেনাদল নিয়ে পুরো দেশ জুড়ে
এমন দাবানল ছড়িয়ে দেবে যে,
এই সেনাদলর
মাত্র অর্ধেক সৈন্য টাইবেরিয়াস
হ্রদ (Sea of Galilee) থেকে
সমস্ত পানি পান করতে সক্ষম
হবে। এটি শুকনো হ্রদ অববাহিকায়
পরিণত হবে। তারা জেরুজালেমে
পৌঁছে ঘোষণা করবে, “আমরা
পৃথিবীর লোকদের জয় করেছি,
এখন আমরা আকাশে
যারা আছে তাদেরও ধ্বংস করব”।
ততক্ষণে যীশু এবং তার অনুসারীরা
সিনেই পর্বতে (Mount Sinai)
পালিয়ে যাবেন
এবং তারা ক্ষুধা ও কষ্টে ভুগবেন।
যীশু আল্লাহর কাছে স্বস্তির
জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ
তার প্রার্থনার প্রতি সম্মান
দেখাতে ইয়াজুজ এবং মাজুজ
সেনাদলর ঘাড়ে ফোড়া সৃষ্টি
করবে। তাদের সবারই দ্রুত
কিন্তু বেদনাদায়ক মৃত্যু
হবে। এরপরে যীশু এবং তার
অনুসারীরা সিনেই থেকে নেমে
আসবেন এবং তারা পচা লাশের
সমুদ্র দেখতে পাবেন যা নিদারুণ
এক দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে
দেবে। এরপর যীশু এই লাশের
সমুদ্র থেকে মুক্তি পাওয়ার
জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া
(প্রার্থনা)
করবেন এবং
আল্লাহ উটের মতো মোটা গলাবিশিষ্ট
অনেক পাখি প্রেরণ করবেন,
এবং তারা তাদের
ঠোঁটে করে লাশগুলো ধরে নিয়ে
দূরে সাগরে ফেলে দেবে।
তখন
থেকে যীশুর রাজত্ব হবে স্বপ্নের
মত। তিনি একজন ন্যায়বিচারক
এবং ন্যায়পরায়ণ শাসক হবেন
যিনি মুহাম্মদ ও তার সুন্নাহর
শিক্ষার প্রচার করবেন,
আল্লাহর সর্বশেষ
ও চূড়ান্ত বার্তাবাহক হিসেবে
মুহাম্মদের অনুকরণীয় জীবন
ব্যবস্থাকে তিনি ফলো করবেন।
মুহাম্মদ দুনিয়াতে যে শরিয়া
নিয়ে এসেছিল তা দুনিয়াতে
মুমিনদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ
করবে। সমস্ত কাফেররা তখন
ধর্মান্তরিত হবে বা মারা যাবে,
কেবল মুমিনরাই
বেঁচে থাকবে, আর
তাই পবিত্র ধর্মযুদ্ধ (জিহাদ)
এবং পরাধীন
কাফেরদের থেকে জিজিয়া
(অমুসলিমদের
কাছ থেকে নেয়া কর) নেয়ার
আর দরকার পড়বে না। বিশ্বজুড়ে
শান্তির রাজত্ব কায়েম হবে,
এমনকি বন্যপ্রাণী,
সাপ এবং
বিচ্ছুগুলিও শান্ত হয়ে যাবে।
মেষশাবক সিংহের সাথে শুয়ে
থাকবে। তখন সম্পদ এত বেশি হবে
যে, কারও
কিছুরই অভাব হবে না। পৃথিবী
ফলফলাদির ভান্ডারে পরিণত
হবে। একটা ডালিম এত বড় হবে
যে, সেটা
দিয়ে পুরো সম্প্রদায়কে
খাওয়ানো যাবে এবং উতপ্ত
সূর্যের আলো থেকে বাঁচার জন্য
ডালিমের খোসাকে ছায়াদার
হিসেবে ব্যাবহার করা হবে।
প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজনের
জন্য একটি উট এবং ছাগল থাকবে।
যীশুর মতো ধার্মিক শাসকের
তত্ত্বাবধানে, লোকেরা
জীবনের অন্য যেকোন কিছুর
ভালোবাসার চেয়ে মুহাম্মদের
সালাতের নিয়মগুলোর প্রতি
বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করবে,
এবং তারা আনন্দের
সাথে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত
নামাজ আদায় করবে। যীশু পৃথিবীতে
চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন
এবং শাসনকালের আরো উনিশ বছর
থাকাকালীন তিনি বিয়ে করবেন
এবং তার সন্তান হবে। তিনি মারা
গেলে তাকে মুহাম্মদের কবরের
পাশে দাফন করা হবে।
অন্ধকার
হয়ে যাওয়ার পরেও মুহাম্মদ
একটানা ভয়ের বয়ান অব্যাহত
রাখলেন। তারপর একদফা দোয়া
অনুষ্ঠিত হলো। মশাল জ্বালানো
হয়, চারদিকে
তখন শয়তানি আলোর ঝলকানি।
মুহাম্মদ মঞ্চে ফিরে এসে কোমরে
হাত রেখে দাঁড়ালেন। তাকে
একটি প্রশ্ন করা হলো “হে আল্লাহর
রাসুল, তখন
কি বিশ্বাসীরা জান্নাতে থাকবে
না? আপনি
যা বর্ণনা করলেন তাতো
জান্নাত।”
-
“না!”
– মুহাম্মদ
আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে গর্জে
উঠলেন। “আমি কি তোমাকে কেয়ামতের
শেষ চিহ্নগুলি, ধোঁয়ার
কথা এবং যেদিন সূর্য পশ্চিম
দিক থেকে উত্থিত হবে,
মাটির নিচ থেকে
প্রানি বের হবে এবং কাবাকে
ধ্বংস করা হবে এসব কথা বলিনি?
আমি কি এখনও
তোমার সাথে প্রলয়-শিংগা
সম্পর্কে কথা বলিনি?”
তার
ধর্মসভা একটানা চলছে,
মুহাম্মদ
বারোঘন্টা আগে যেমনভাবে শুরু
করেছিলেন তেমনই পূর্ণ শক্তিতেই।
তিনি তার মজলিসে যন্ত্রণাময়
কল্পনাগুলো একে একে বয়ান
করে যাচ্ছিলেন - যীশুর
মৃত্যুর পরে অন্য শাসকরা আসবে
এবং আবারও অরাজকতা ও অবনতি
ধীরে ধীরে সমাজে প্রবেশ করবে।
একপর্যায়ে আল্লাহ এক ঘন
কুয়াশা বা ধোঁয়ায় আকাশ
ঢেকে দেবেন এবং এই অবস্থা
চল্লিশ দিন চলবে। এই ধোঁয়া
ঈমানদারদের অসুস্থ করে তুলবে
এবং যারা কুফরিতে লিপ্ত ছিল
তারা অজ্ঞান হয়ে পড়বে। এটি
শেষ হবে যখন একটি রাত তিনদিনের
সমান স্থায়ী হবে। তারপরে
একটি মহাজাগতিক বিশৃঙ্খল
ঘটনা ঘটবে - সূর্য
পশ্চিম দিক থেকে উঠবে এবং এর
রশ্মিগুলি অত্যন্ত নিস্তেজ
হয়ে যাবে । মধ্যাহ্নের সময়
এটি নিজেই জ্বলে উঠবে এবং
তারপরে সূর্যটি যেখানে সাধারণত
অস্ত যাওয়ার কথা সেখানেই
অস্ত যাবে। সূর্য যখন তার
জায়গাই ফিরে যাবে সেই মুহূর্তটি
বিশ্বাসীদের জন্য তাদের পাপের
অনুশোচনা (তাওবা)
করার কিংবা
অবিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর
উপর ঈমান (বিশ্বাস)
স্থাপন করার
সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। কর্মফল
ভোগ করার জন্য তখনই তাদেরকে
আবদ্ধ করে ফেলা হবে।
এবং
তারপরে মহান আলামতটি দেখা
দেবে হবে - কাবার
নিকটে একটি ভূমিকম্পে পৃথিবী
বিভক্ত হয়ে যাবে এবং সেই ফাটল
দিয়ে আরবি ভাষায় কথা বলা
বিরাট এক জন্তু বের হয়ে আসবে।
মাথা থেকে ধুলো ঝেড়ে ফেলে
এটি কাবার দিকে রওনা হবে এবং
একে দেখে সমস্ত লোকেরা পালিয়ে
যাবে না তাদের মুখমণ্ডলগুলি
উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল
করবে।
কাবা
থেকে শুরু করে এই জন্তুটি
অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বভ্রমণ
করবে। আল্লাহর আদেশে মুমিনদের
মুখ সে উজ্জ্বল করে দেবে,
আর কাফেরদের
মুখ কালো করে দেবে। এইভাবে
সমস্ত মানবজাতিকে বিভক্ত করা
হয়ে গেলে পশুটি অদৃশ্য হয়ে
যাবে। তারপর দক্ষিণ দিক থেকে
একটি সুগন্ধযুক্ত বাতাস সারা
বিশ্বে প্রবাহিত হবে এবং
উজ্জ্বল মুখযুক্ত সমস্ত
মানুষগুলো মারা যাবে। কেবল
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর
অবিশ্বাসী কালো মুখধারী
কাফেররাই বেঁচে থাকবে। এই
কালো বাহিনীই কাবা ধ্বংস করবে।
কলঙ্কজনক এবং অকল্পনীয় সব
ঘটনা ঘটতে থাকবে তখন। কোরআনের
বাণীগুলো তার পৃষ্ঠা থেকে
অদৃশ্য হয়ে যাবে, এবং
কেউ আল্লাহকে ভয় করবে না বা
তাঁর রাসুল মুহাম্মদের কথা
মানবে না। দুর্নীতি,
শয়তানি,
অনৈতিকতার
মধ্য দিয়ে মানুষ তার আচরণের
সবচেয়ে খারাপ স্তরে নিপতিত
হবে। স্বৈরাচারীরা তাদের
প্রজাদের উপর কঠোরতম শাস্তি
প্রদান করবে এবং পিছিয়ে পড়া
মুর্খ জনগণ রক্তপাত ও নৈরাজ্যের
শিকার হবে। এমন অজ্ঞতা বিরাজ
করবে যে, কোন
একজন পুরুষ, নারী
বা শিশু আল্লাহর নাম উচ্চারণও
করবে না। ঠিক সেই মুহূর্তে
ইয়েমেনে একটি মারাত্মক দাবানল
ছড়িয়ে পড়বে এবং যা উত্তর
দিকে ধাবিত হবে। লোকেরা এটা
থেকে পালিয়ে সিরিয়ার দিকে
যাত্রা করবে এবং যখন সবাই
সিরিয়ায় একত্রিত হবে,
তখনই এই আগুনের
অবসান হবে। এটিই কিয়ামতের
চূড়ান্ত নিদর্শন,
মুহাম্মদ ঘোষণা
করেছেন, সেই
মুহূর্তে যখন ইস্রাফিল ফেরেস্তা
কেয়ামতের ঘোষণা দেয়ার জন্য
শিংগা বাজাবেন। প্রথমে কেউ
খেয়াল করবে না, তবে
শব্দের তীব্রতা বজ্রের চেয়ে
আরও জোরে বৃদ্ধি পাবে,
এবং আতঙ্কে
লোকেরা হতভম্ব হয়ে পড়বে।
কারণ, এটিই
সৃষ্টির চুড়ান্ত ধ্বংসের
শব্দ হয়ে উঠবে; সমুদ্র
পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়বে,
পর্বতগুলি
ভেঙ্গে যাবে, আকাশগুলি
ছিন্নভিন্ন হয়ে ভেঙে পড়ে
যাবে, এবং
চাঁদ, তারা
এবং সূর্য টুকরো টুকরো হয়ে
পড়বে, কিছুই
আর অবশিষ্ট থাকবে না। এর মাধ্যমে
পুনরুত্থানের সূচনা হবে।
সমস্ত লোকেদের যাদের অস্তিত্ব
ছিল, তাদের
মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত
করা হবে। তারা মাংসে পুনরুত্থিত
হবে। কাঁপতে কাঁপতে তারা
আল্লাহর নিকট থেকে তাদের ভাগ্য
নির্ধারণের অপেক্ষায় থাকবে।
মুহাম্মদ তার কিছু আয়াত
তেলাওয়াত করে ভয় উদ্রেককারী
একটানা বয়ানের শেষ পর্যায়ে
চলে আসেন। প্রকৃতপক্ষে,
তিনি তার পুরো
বয়ানকে কোরআনের উদ্ধৃতিসমূহ
দিয়ে সংযুক্ত করেন। তিনি এই
কথাটি দিয়ে শেষ করেন :
“সেই দিনটিতে
মানুষ কান্না করবে”,
“পালানোর মতো
জায়গা কোথায়? সব
বিফলে যাবে কোনও আশ্রয় নেই,
আপনার পালনকর্তার
কাছেই সেদিন একমাত্র আশ্রয়
মিলবে ” (১০)।
এই
ধরনের ভয় সঞ্চারকারী মাহফিলগুলো
তার অনুগামীদের মধ্যে বেশকিছুকে
মানসিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত
করে তুলত, এবং
এদের কেউ মানসিক রোগীর মত আচরণ
শুরু করলে মাঝে মাঝে তাকে
বুঝিয়ে শুনিয়ে পরামর্শ
দিতে হত। যেদিকেই তারা তাকাত,
শুধু কেয়ামতের
আলামতই দেখতে পেত। এরকম একটানা
বয়ানের পরে মুহাম্মদের বেশ
কয়েকজন সাহাবি তার কাছে এসে
জানায় যে, তারা
খেজুর বাগানের মাঝে একটি
তালগাছে দাজ্জালকে দেখতে
পেয়েছে। তাদের মুখমণ্ডল বেশ
বিমর্ষ দেখাচ্ছিল এবং মুহাম্মদ
তাদেরকে ভয় না পেতে উৎসাহ
দিয়ে বললেনঃ “আমি তোমাদের
মধ্যে থাকাকালীন যদি সে বেরিয়ে
আসে, তবে
আমি তোমাদের পক্ষ হয়ে তার
বিরুদ্ধে লড়াই করব” (১১)।
তবে, দাজ্জাল
যদি তার মৃত্যুর পরে আসে তবে
তাকে মোকাবেলার জন্য আল্লাহর
উপর নির্ভর করতে হবে। মুহাম্মদ
তার বিমর্ষ অনুসারীদের পরামর্শ
দিয়েছিলেন যে, শয়তানের
মুখোমুখি হলে তাদের উচিত
কোরআনের অধ্যায়গুলি থেকে
শুরুর আয়াতগুলো তেলাওয়াত
করা। আয়াতগুলো তাদের খারাপ
যেকোন কিছু থেকে রক্ষা করবে।
তিনি তাদেরকে কোরআনের ১৮ নম্বর
সূরা পাঠ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন
যে সুরাটি তাদেরকে এ জাতীয়
(শয়তান
বা দাজ্জালের আক্রমণ)
পরিস্থিতিতে
সাহায্য করবে; এবং
তিনি তাদের স্মৃতিকে সতেজ
করার জন্য এটি আবৃত্তিও
করেছিলেন।
দাজ্জালের উপস্থিতির সময় সম্পর্কে মুহাম্মদ নিশ্চিত ছিলেন না। তিনি ইতিমধ্যে বিশ্বে জন্মগ্রহণ করতে পারেন, তবে দাজ্জাল মুহম্মদের মৃত্যুর কয়েক বছর না যাওয়া অবধি তার উপস্থিতি প্রকাশ করবে না। দাজ্জালকে একটি দ্বীপে দেখা গিয়েছে, এমন একটি সংবাদ মুহাম্মদের ভবিষ্যদ্বাণীকে আরেকটু গতি দিয়েছিল। আর এই সংবাদ এনেছিল তামিম দারি (Tamim Dari) নামের গাজা থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মান্তরিত হওয়া একজন ব্যক্তি (১২), যিনি মুহাম্মদকে বলেছিলেন যে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে দ্বীপটিতে দাজ্জালকে দেখেছেন এবং কুড়িদ বর্ণনা দেয়ার পর মুহাম্মদ নিশ্চিত হলেন যে সে মিথ্যা বলছে না।
এই
সংবাদ শুনে উত্তেজিত হয়ে
মুহাম্মদ বিশ্বস্তদের মসজিদে
বিশেষ ঘোষণার জন্য ডেকে আনতে
দূত প্রেরণ করলেন। শত শত মুমিনরা
যে যা কাজ করছিল তা ফেলে রেখে
মসজিদে জড়ো হয়েছিল। তাদের
নামাজে ইমামতি করার পরে মুহাম্মদ
মুখে এক আগ্রহী হাসি নিয়ে
তার সচরাচর জায়গা মিম্বারের
আসনে গেলেন। তিনি বললেন,
“তোমরা কি জান
যে, আমি
কেন তোমাদের জড়ো হতে বলেছি?”
মুমিনদের
বেশিরভাগ সেই বাধ্যতামুলক
জবাব দিল – “আল্লাহ ও তাঁর
রাসুলই ভালো জানেন”। মুহাম্মদ
তখন বলেছিলেনঃ “আল্লাহর কসম,
আমি তোমাদের
কোন উপদেশ বা সতর্কতা দেবার
জন্য জড়ো করিনি। তবে আমি
তোমাদের এখানে এনেছি,
কারণ একজন
খ্রিস্টান তামিম দারি যে ইসলাম
গ্রহণ করেছে, আমাকে
এমন কিছু বলেছে যার সাথে দাজ্জাল
সম্পর্কে আমার বলা কথার মিল
আছে”(১৩)।
মুহাম্মদ
ধর্মান্তরিত তামিম থেকে যা
শুনেছিলেন তা হুবহু বলতে
লাগলেন : তামিম
ত্রিশজন লোকের সাথে বণিক
জাহাজে ছিলেন। জাহাজটি ঝড়ের
কবলে সমুদ্রের কাছে হারিয়ে
যায় এবং একটি দ্বীপে এসে
আছড়ে পড়ে। তারা নৌকাগুলি
নিচে নামিয়ে উপকূলে চলে এসে
লোম আচ্ছাদিত একটি বিশাল জন্তু
দেখতে পেলেন, যার
সামনে আর পেছনে দেখতে একইরকম।
তারা বলল, “তোমার
প্রতি সমবেদনা, কে
তুমি?” প্রানীটি
বলল “আমি জুরাসা (Jurassa )”।
তারা তার সম্পর্কে মুহাম্মদ
সম্পর্কিত আরও খোঁজ নেয়ার
চেষ্টা করেছিল, তবে
প্রাণীটি উল্টা তথ্যের জন্য
তাদের প্রলুব্ধ করছিল এবং
বলেছিল যে, তারা
যথাসময়ে তার সম্পর্কে জানতে
পারবে। এদিকে, তাদেরকে
আশেপাশে কোন মানুষ বা কোন
আশ্রমের সন্ধানে বের হতে হবে
যেখানে কেউ তাদের জন্য অধীর
আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আটকা
পড়ে থাকা নাবিকরা এই ভয়ে
পথ চলতে লাগল যে, তারা
হয়ত কোন শয়তানের খপ্পরে
পড়তে যাচ্ছে, কিন্তু
তারা তখন এমন এক লোককে পেয়েছিল
যার হাত তার ঘাড়ের পেছনে
বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং যার
পায়ে লোহার বেড়ি পরানো ছিল।
নাবিকরা বন্দিকে দেখে বলেছিল
: “তোমার
প্রতি সমবেদনা, তুমি
কে?” লোকটি
তার শেকলগুলিতে হিংস্রভাবে
টান দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে
বলল “শীঘ্রই আপনারা আমার
সম্পর্কে জানতে পারবেন,
তবে আপনারা
কারা আমাকে বলুন”। তারা আরব
থেকে এসেছে জানার পরে বন্দী
তাদেরকে একাধিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা
করেছিল, যার
মধ্যে একটি টাইবেরিয়াস হ্রদের
সম্পর্কিত ছিল। জবাবে বলেছিলেন,
“আপনি এটি
সম্পর্কে কী জানতে চান?”
শৃঙ্খলে থাকা
লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন,
“এতে কি পানি
আছে?” তারা
তাকে জানিয়েছিল যে, এতে
প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে।
তিনি জবাব দিয়ে বললেন,
“আমি মনে করি
এটি শীঘ্রই শুকিয়ে যাবে”।
অতঃপর তিনি তাদেরকে নিরক্ষর
নবী সম্পর্কে বলার জন্য অনুরোধ
করলেন এবং আরবরা জবাব দিল যে,
তিনি মক্কা
থেকে ইয়াছরিবে গিয়েছিলেন
এবং তার বিরোধীদের অনেককে
পরাস্ত করেছিলেন, যারা
এখন তার কাছে আনুগত্য প্রকাশ
করেছে। তখন শৃঙ্খলাবদ্ধ
ব্যক্তি তার পরিচয় প্রকাশ
করে বলল, “আমি
দাজ্জাল”। শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যক্তি
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে,
তিনি শীঘ্রই
তার শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে সবকিছু
ধ্বংস করে ফেলবেন, মক্কা
ও ইয়াছরিব বাদে কোনও শহরকে
ছাড়বেন না। এই দুটো শহর কেবল
তার জন্য নিষিদ্ধ। তিনি যদি
ওদের কাছে যান, তলোয়ার
দিয়ে সজ্জিত ফেরেস্তারা তার
পথ আটকে দেবে।
তামিমের
কাছ থেকে তিনি যে কাহিনী
শুনেছিলেন, তা
পুনর্বিবেচনা করতে গিয়ে
মুহাম্মদ উত্তেজনায় চঞ্চল
হয়ে পড়লেন। টাইবেরিয়াস
জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ার
একমাত্র কারণ হতে পারে প্রচণ্ড
তৃষ্ণার্ত ইয়াজুজ-মাজুজ
কর্তৃক তার জল পান করা;
এবং স্বর্গদূতদের
সারি মক্কা ও মদিনায় যাওয়ার
পথে দাজ্জালকে বাধা দেয়া!
এই দুটো ছিল
তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলির
নিশ্চিতকরণ নিদর্শন -
“আমি কি আপনাকে
এরূপ কোনও বিবরণ বলিনি?”
(১৪)।
কিন্তু মুহাম্মদ তামিমের
সাথে একটু দ্বিমতও পোষণ করলেন
এই বলে যে, দাজ্জাল
ইয়াছরিবের পশ্চিম বা
উত্তর-পশ্চিমের
কোথাও থাকার কথা এবং সে সম্ভবত
কোনও দ্বীপে বন্দি হয়ে আছে।
এটি ভুমধ্যসাগর বা লোহিত
সাগরের কোথাও হবে। তিনি দৃঢ়
বিশ্বাস করেছিলেন যে,
দাজ্জাল এবং
তার সেনাদল পূর্বদিক তথা
পারস্য থেকে অগ্রসর হবে।
উত্তেজনায় ফেটে গিয়ে মুহাম্মদ
তার লাঠিটা দিয়ে মেঝেতে আঘাত
করলেন, আর
সেটিকে পূর্ব দিকে তাক করে
রাখলেন। তিনি বললেন,
অশুভ দাজ্জাল
আসবে ঐ দিক থেকেই।
তামিম
নামে একজন মদ ব্যবসায়ী পর্যটক
গল্পটির রহস্যময়তা বিচার
করে, মুহম্মদের
শেষ সময়ের ঘটনাবলী জেনে থাকতে
পারেন। এবং তিনি মুহাম্মদের
সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে
দ্বীপের গল্পটির অবতারণা
করেন। ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি
বছরের পর বছর মক্কা আর ইয়াছরিবে
যাতায়াত করেছেন, আর
মুহাম্মদের কাফেলার সাথীদের
সাথে আলাপের বিষয়বস্তু থেকে
মুহাম্মদের পদক্ষেপ সম্পর্কে
জেনে থাকা তার জন্য সহজ ছিল।
খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাস দ্বারা
অনুপ্রাণিত হয়ে,
পুনরুত্থানবাদী
আর খৃস্টবিরোধীদের চারদিকে
বেশ কিছু গল্প ভেসে বেড়াচ্ছিল।
একজন খ্রিস্টান হিসেবে তামিম
সেগুলোর মধ্যে কিছু শুনে
থাকবেন, এবং
এই ঘটনার সাথে খাপ খাওয়াতে
বিশেষ এই গল্পটির কাটছাঁট
করা তার কাছে খুবই সহজ একটা
কাজ ছিল। তামিম ছিলেন এক বিচক্ষণ
লোক, সুযোগ
সন্ধানীও যিনি মসজিদে যাওয়া
আর মুহাম্মদের প্রতি আনুগত্য
প্রদর্শন করার আগে বেশ পরিশ্রম
করেছেন। মুহাম্মদ যা শুনতে
চেয়েছিলেন তিনি সেটাই
মুহাম্মদকে বললেন, আর
মুহাম্মদ সেই টোপ, দড়ি
আর খাবার সবটাই গিলেছিলেন।
তামিম শেষপর্যন্ত মুহাম্মদের
উপদেষ্টা হয়েছিলেন এবং
পরবর্তী সময়ে খলিফাদের অধীনে
তাকে জর্ডানে একটা তালুক দেয়া
হয়েছিল।
মুহাম্মদের শেষ সময় বা কেয়ামত নিয়ে অত্যধিক উৎকণ্ঠা তার অনুসারীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে, এবং তারা সর্বত্র দজ্জালের (Dajjal) আলামত খুঁজে বেড়াতে থাকে। তিনি প্রতিটি কোণে ছিলেন; সর্বদা পাথরের পেছনে আটকে ছিল; এমনকি প্রতিটি খেজুর গাছের প্রতিটি পাতায়ও তারা দাজ্জাল খুঁজে পেত। এটি অনিবার্য ছিল যে, শেষপর্যন্ত কেউ না কেউ শয়তান হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটির সমাপ্তি হল, যখন সংখ্যালঘু ইহুদি গ্রামের বারো বছর বয়সী রোগাপাতলা এক ছেলে মুহাম্মদের ক্রোধ থেকে রক্ষা পায়। তার ডাক নাম ছিল সাফ (Saf), আর সে ছিল সাইয়াদ (Sayyad) নামে এক লোকের সন্তান। ছোট থেকেই ছেলেটি ভবিষ্যৎ বলতে পারার এক প্রতিভা নিয়ে সবার মাঝে এসেছিল, এবং লোকেরা পরামর্শ বা ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে তার কাছে আসত। দাজ্জাল-উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ার পরে সাফ সন্দেহভাজনদের এক নম্বরে পরিণত হয়। গুজব রটে গিয়েছিল যে, নিজেকে ঈশ্বরের রাসুল বলে প্রচার করার জন্য সাফ বড় মাপের ছলাকলা অবশ্যই কিছু করবেন। মুহাম্মদ এটা আঁচ করতে পেরেছিলেন, এবং একদিন তিনি উমর ও অন্যদের সাথে বিষয়টার তদন্ত করতে বেরিয়ে যান। তারা ছেলেটিকে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে দেখলেন। মুহাম্মদ তার পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন, “ইবনে সাইয়াদ, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে আমি আল্লাহর রাসুল?”
যদিও
মুহাম্মদের সাথের লোকজন ইবনে
সাইয়াদের উপর ঝাঁপিয়ে
পড়েছিল, বিশেষতঃ
উমর যিনি এদের মাঝে সবচেয়ে
লম্বা এবং বলিষ্ঠ ছিলেন। অবশ্য
ছেলেটিও মোটেও নড়বড়ে ছিল
না। সাফ বলল, “আমি
সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি
নিরক্ষরদের রাসুল”। এর মানে
হচ্ছে, মুহাম্মদ
আরবদের রাসুল যারা মূলত
অশিক্ষিত, কিন্তু
শিক্ষিত ইহুদিদের রাসুল না।
সে উল্টো মুহাম্মদকে চ্যালেঞ্জ
জানালো : “আপনি
কি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে আমিই
আল্লাহর রাসুল?” (১৫)
ততদিনে
খুব কম লোকই মুহাম্মদের সাথে
ঠাট্টা করে কথা বলত। তিনি
ছেলেটির সরু কাঁধে চেপে ধরে
বললেন, “তোমার
কাছে কি ধরনের স্বপ্ন আছে?”
সাফের
উত্তর রহস্যজনক ছিল, সে
বলল “যে সত্য কথা বলে সে এবং
যে মিথ্যা বলে সেও আমার কাছে
আসে”।
মুহাম্মদ
তাকে জানালেন যে, তিনি
বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন এবং
তিনি মনে মনে কি কি ভাবছেন তা
জানিয়ে তার ক্ষমতা প্রমাণের
জন্য তাকে চ্যালেঞ্জ দিলেন।
যদি ছেলেটি সত্যই মহান ছলাকার
হয়, তবে
সে মুহাম্মদের মনে যে ভাবনা
আছে তা জানার কথা। শেষ সময়ে
করণীয় নিয়ে মক্কায় রচিত
একটা সুরার (অধ্যায়ের)
একটা পংক্তি
(আয়াত)
আছে ‘ধোঁয়া'
(দুখান নামে।
আয়াতটি এমন – “অতপর অপেক্ষা
করো সেই দিনের জন্য, যখন
আকাশে একটি দৃশ্যমান ধোঁয়া
দেখা দেবে” (১৬)।
মুহাম্মদ
জিজ্ঞেস করলেন, “বল
তো আমি কি ভাবছি?”
সাফ
‘ধোঁয়া' শব্দটি
বেছে নিল, তবে
তার উত্তরটা শেষ সময়ের
(কেয়ামতের)
সম্পর্কিত
ছিল না। সে কেবল উত্তর দিল
“ধোঁয়া"।
মুহাম্মদ
উল্লসিত হয়ে গেলেন। এটি
দাজ্জালের সূত্র খুঁজে পাওয়ার
একটা মুহূর্ত ছিল। ছেলেটি
ভালো, সত্যিই
দারুণ, তবে
তার দক্ষতা একজন তান্ত্রিকের
স্তরের উপরে ওঠেনি। হ্যাঁ,
যা অন্যকে
শুনতে দেয়া হয়নি তার তাই
শোনার দক্ষতা ছিল। তবে মুহাম্মদ
বিশ্বাস করতেন যে, এই
জাতীয় লোকেরা খারাপ জীনের
কাছ থেকে তাদের জ্ঞান অর্জন
করত, মুহাম্মদের
মতো সম্পর্কযুক্ত উঁচু কোন
উৎস থেকে নয়। একটি জিন মুহাম্মদের
মন থেকে 'ধোঁয়া'
শব্দটি বেছে
নিয়ে ইবনে সাইয়াদের (সাফ)
মনে জানিয়ে
দিয়েছিল। জিনরা ক্ষতিকর
গুজব ছড়াত, যারা
একজন ব্যক্তির মন থেকে জিনিসগুলি
বেছে নিত এবং অন্য ব্যক্তির
কাছে তা সরবরাহ করতে পারত।
তবে তারা ভালো বার্তাবাহক
ছিল না, বরং
তারা বিচ্ছিন্ন কিছু বার্তা
প্রচার করত। মুহাম্মদ তাই
মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন,
যদিও সব সন্দেহের
ঊর্ধ্বে ওঠে নিশ্চিত ছিলেন
না যে, সাফ
তথা ইবনে সাইয়াদই সেই ভয়ঙ্কর
দাজ্জাল ছিলেন না। তিনি তাই
ইবনে সাইয়াদের কথা বাতিল
করে দিয়ে বলেছিলেন,
“তুমি নিজের
পদমর্যাদার চেয়ে বেশি আর
কিছু পেতে পার না”। এর অর্থ,
সাইয়াদের
পুত্র এক তান্ত্রিক ছাড়া আর
কিছুই না। মুহাম্মদের সাথে
ছেলেটি এরকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ
ভঙ্গিতে কথা বলছে দেখে উমর
বেশ হিংস্র হয়ে গেলেন। ছেলেটির
সাথে মুহাম্মদের কথা বলা শেষ
হবার পর উমর তার তলোয়ার হাতে
নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “আমি কি
তার মাথা কেটে দেব,
মুহাম্মদ?”
মুহাম্মদ তার হাত ধরে বললেন, “যদি সে কেয়ামতের সময় উপস্থিত হওয়া দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে পরাভূত করতে পারবে না। আর যদি সে তাই না হয় তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোন উপকার হবে না”। গল্পটির অন্য একটি সংস্করণে মুহাম্মদ বলেছিলেন যে, কেবলমাত্র যীশুই দাজ্জালকে হত্যা করতে সক্ষম হবেন।
সাইয়াদের
পুত্রের প্রতি মুহাম্মদের
আগ্রহ ছিল প্রচুর। সে যে দাজ্জাল
নয় এই ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি
নিশ্চিত হননি। সম্ভবত তিনি
আশা করেছিলেন যে, সে
যেন দাজ্জালই হয়, যার
অর্থ দাঁড়াবে যে, কেয়ামত
তার খুবই সন্নিকটে বা একেবারে
হাতের মুঠোয়। পরে তিনি এর
শেষ দেখার জন্য আরও একটি
প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। এবার
তার সাথে সাক্ষাতের ঘটনাটির
প্রমাণ ধরে রাখার জন্য তিনি
সাথে করে এক লিপিকার নিয়ে
যান। সেই বিশেষ দিনটিতে,
সাফ একটি
তালগাছের ছায়ায় ঘুমাচ্ছিল।
মুহাম্মদ সেই লিপিকারকে সাথে
নিয়ে বাগানের ভিতর দিয়ে
হামাগুড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছে
একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে
রইলেন, এই
আশায় যে ছেলেটি ঘুমের মাঝে
কথা বলে উঠবে। এটি নিঃসন্দেহে
ইঙ্গিত দেবে যে, সে
নিজে শয়তানের সাথে কথোপকথন
করছে। তবে সাফের মা তাকে খুঁজে
বের করলেন এবং তার ছেলেকে
সতর্ক করলেন যে, মুহাম্মদ
গাছের আড়ালে লুকিয়ে আছে।
ছেলেটি লাফ দিয়ে ওঠে পড়ে
আর মুহাম্মদের দিকে তাকায়।
হতাশ মুহাম্মদ পরে তার সঙ্গীকে
বললেন, “নারীটি
যদি তার ছেলেকে একা ছেড়ে দিত,
সে সবকিছু
পরিষ্কার করে দিত”(১৭)।
মহাপ্রতারক
হিসেবে সবার সন্দেহ থেকে
সাইয়াদের ছেলে সাফ কখনোই
নিজেকে বের করে আনতে পারেনি।
সে যেখানেই গেছে, লোকেরা
তার দিকে ইশারা করত। অবশেষে
সে মুহাম্মদের ধর্মে যোগ
দিয়েছিল, তবে
তাতে কিছুই হেরফের হয়নি;
লোকেরা তখনও
তাকে দাজ্জাল হিসেবে বিবেচনা
করত। মুহাম্মদের মৃত্যুর
একদশক পর সে মক্কায় একটি
তীর্থযাত্রায় ছিল, যখন
সে মুহাম্মদের অনেক যুদ্ধের
সাথী একজন প্রবীণ ব্যক্তির
সাথে শিবির স্থাপন করেছিল।
তাকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে প্রবীণ
লোকটি তাকে দুরে সরে যেতে
বলেছিল। গভীরভাবে আহত হলেও
সাফ ছাগলের তাজা দুধ সরবরাহ
করে সেই প্রবীণ লোকটির মন
ভোলানোর চেষ্টা করেছিল। সবার
কাছ থেকে প্রত্যাখ্যানের
কারণে সে কিভাবে ফাঁসিতে ঝুলতে
চেয়েছিল, এই
কথা বলতে গিয়ে সে কান্নায়
ভেঙ্গে পড়ল। এই ধরনের
প্রত্যাখ্যান একজন মানুষকে
আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার
জন্য যথেষ্ট ছিল।
["আমি কি তার মাথা কেটে ফেলব, মুহাম্মাদ?” এক ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টা বালককে হত্যা করার জন্য উমর তার তলোয়ার বের করেন যাকে মুহাম্মদ ভয়ঙ্কর দাজ্জাল তথা শয়তান বলে সন্দেহ করতেন। মুহাম্মদ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, কেয়ামতের দিনটি সামনে ঘনিয়ে আসছে এবং এর অন্যতম লক্ষণ হবে দাজ্জালের উপস্থিতি। ছেলেটি একজন প্রতিভাশালী ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, যার গোপন বিষয় সম্পর্কে কথা বলার দক্ষতার কারণে লোকজন তাকে ভয় পেত। এখানে মুহাম্মদ তাকে পরীক্ষা করছেন এবং এই উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, সে একজন তান্ত্রিক ছাড়া বেশি কিছু না]
ইবনে
সাইয়াদ সম্পর্কে প্রচলিত
সংস্কারগুলোর প্রধান উৎস ছিল
হযরত উমরের পুত্র আবদুল্লাহ।
তিনি সাফ সম্পর্কে তার বাবার
কাছ থেকে সব শুনেছিলেন। সে
যে দাজ্জাল ছিল তা নির্ধারণ
করার জন্য মুহাম্মদ যে প্রচেষ্টা
করেছিলেন সেই গল্পও। এবং তিনি
সারাজীবন নিশ্চিত ছিলেন যে,
ইবনে সাইয়াদ
প্রকৃতপক্ষেই সেরা প্রতারক
ছিল। ইসলামের কিতাবি সংস্করণগুলোতে
বর্ণিত হয়েছে যে, আবদুল্লাহ
ঘোষণা করেছেন, “আমি
আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি,
ইবনে সাইয়াদ
যে খ্রিস্টবিরোধী তাতে আমার
কোন সন্দেহ নেই” (১৮)।
বছরখানেক পরে, মাঝবয়সে এক রাস্তায় আবদুল্লাহর সাথে সাফের দেখা হয়েছিল। মুখোমুখি হওয়ার সময় দেখা গেল, সাফের পুত্র একটি চোখের সংক্রমণে ভুগছিল এবং এটি ফুলে গিয়েছিল। তাকে নিশ্চয়ই শয়তানের মতো দেখতে লাগছিল, যেমন মুহাম্মদ তার অনুসারীদের বলেছিলেন 'দাজ্জাল এক চক্ষুবিশিষ্ট হবে, খারাপ চোখটি ফুলে আঙ্গুরের মত বেরিয়ে আসবে।' সাফের ফুলে যাওয়া চোখটি অবশ্যই পুষ্ট আঙ্গুরের মতো লাগছিল।
আবদুল্লাহ
তখন সাফকে বললেন, “আপনার
চোখে কি হয়েছে?”
সাফ
জবাবে বললেন “আমি জানি
না”
আবদুল্লাহ
বললেন “এটি আপনার মাথায় আছে,
আর আপনি এটি
সম্পর্কে জানেন না?”
অনেকদিন ধরে চোখের যন্ত্রণায় ভোগার ফলে এই কথা শুনে সাফ রেগে ফেটে পড়লেন। তিনি আবদুল্লাহর বহনকারী জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “আল্লাহ ইচ্ছা করলে সেটার মাঝেই একটি চোখ তৈরি করতে পারেন”। তিনি আবদুল্লাহর কাছে গাধার মতো ডাকাডাকি করতে লাগলেন, পাগলের মত তিনি ডেকেই গেলেন। সম্ভবত আবদুল্লাহর উপর রাগ দেখানোর এটিই ছিল তার ধরন, যার বাবা তার মাথা কেটে ফেলতে চেয়েছিলেন মুহাম্মদের সাথে ঠাট্টার করার কারণে। সাফ হয়তো এসবের অনেককিছুই নিয়েই ভাবতেন।
সেই
অভিজ্ঞতা আবদুল্লাহকে বিচলিত
করেছিল, তবে
ততদিনে আব্দুল্লাহ ক্রমশ
ছড়িয়ে পড়া ধর্মটির একজন
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে
ওঠেছিলেন। তিনি তার বোন হাফসাকে
দেখতে গেলেন যিনি মুহাম্মদের
একজন বিধবা স্ত্রী ছিলেন।
তিনি যখন ইবনে সাইয়াদের (ibn
Sayyad) সাথে মুখোমুখি
হওয়ার কথা হাফসাকে জানালেন,
তখন হাফসা তাকে
এতটা নির্বোধ হওয়ার জন্য
তিরস্কার করে বললেন “আপনি
কেন ইবনে সাইয়াদকে রাগাতে
গেলেন? আপনি
জানেন যে, তার
চরম রাগ দাজ্জালকে পৃথিবীতে
হাজির করবে?” (১৯)